
ফজলে রাব্বি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে ১৪ বছর ধরে টেলিভিশন সাংবাদিকতা করেছেন। চলচ্চিত্র আন্দোলনেরও সক্রিয় কর্মী তিনি।

যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার শিরোনাম ছিল ‘BANGLADESH LIBERATED’। এতে বলা হয়, স্বাধীন রাষ্ট্রের আবেগে ঢাকা শহর ফেটে পড়েছে।

১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো যুদ্ধে পরাজয় মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি তার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার জন্য দায়ী করেন।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজির আগে পাঠানো বার্তার জবাবে দুপুরের পরে আসা এক বার্তায় ইয়াহিয়া খান যুদ্ধবিরতির অনুমোদন দেন। নিয়াজি সন্ধ্যায় ঢাকায় নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল হার্বার্ট ড্যানিয়েল স্পিভাকের কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়ে চিঠি লেখেন।

মুজিবনগরের একটি সূত্র এদিন জানায়, বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের পরাজয় সুনিশ্চিত বুঝতে পেরে রিচার্ড নিক্সন সপ্তম নৌবহরকে আদেশ দিয়েছেন, তাদের একাংশ যেন এখনই বঙ্গোপসাগরে চলে যায়। ওয়াশিংটন মস্কোকে আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। তবে এটাও চায় না যে পাকিস্তান ভেঙে পড়ুক।

লন্ডনের মহাত্মা গান্ধী হলে ইন্ডিয়া লিগ আয়োজিত এক সভায় লেবার পার্টির সাবেক মন্ত্রী পিটার শোর বলেন, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি এবং ব্যবহারিক সাহায্য দিতে যুক্তরাজ্যের তৈরি থাকা উচিত।

জামালপুর ও ময়মনসিংহের পতনের পর ঢাকার দিকে এগোতে থাকে যৌথ বাহিনী। উত্তর-পূর্বে যৌথ বাহিনী মেঘনা অতিক্রম করে ঢাকার দিকে এগোচ্ছে আরেকটি দল।

পেট্রোবাংলার হিসাবে বর্তমানে গড়ে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ২৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় খনিগুলো দৈনিক ১৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানি করা এলএনজি থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে ১০৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে প্রতিদিন অন্তত ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর নির্দেশে অধিকৃত বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এদিন থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার করা হয়েছিলো বলে পরবর্তীতে জানা যায়।

২০০৬ সালের ৩০ আগস্ট উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন না করা, বাংলাদেশে এশিয়া এনার্জির কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও সরকারের সাথে চুক্তি বাতিলসহ সাত দফা দাবি মেনে চুক্তি সই করে সরকার।

বিজয় প্রায় নিশ্চিত বুঝতে পেরে কাজের গতি বেড়ে যায় বাংলাদেশ সরকারের। মুজিবনগরের এদিন সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মুক্ত এলাকায় বেসামরিক প্রশাসনের কার্যক্রম শুরু এবং খাদ্য, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

যৌথ বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এদিন মুক্ত কুমিল্লা পরিদর্শন করেন। সকালে যৌথ বাহিনী বিমানবন্দরসহ কুমিল্লা শহর দখল করে। অরোরা বাংলাদেশ-ভারতের পতাকা লাগিয়ে কুমিল্লা বিমানবন্দরে পৌঁছালে জনতা হর্ষধ্বনি দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়।

সিলেটের পতন হয় যশোরের কিছুক্ষণ পর। যৌথ বাহিনী প্রথমে শালুটিকর বিমানবন্দর দখল করে। সেখানে যৌথ বাহিনীর ছত্রীসেনা অবতরণ করে। এরপর চারদিক থেকে শহরের দিকে অগ্রসর হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পাকিস্তান সেনারা পিছু হটে মেঘনা নদীর ওপারে ভৈরব বাজারে অবস্থান নেয়।

কূটনৈতিক বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে যখন তোলপাড় চলছিল, রণাঙ্গনে তখন একের পর এক এলাকা মুক্ত হচ্ছিল পাকিস্তানের হাত থেকে।

রণাঙ্গনে ক্রমাগত কোণঠাসা হয়ে পড়া পাকিস্তানি সৈন্যদের সম্মান বাঁচানোর শেষ চেষ্টা চলতে থাকে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে। বাংলাদেশকে ঘিরে ঠান্ডা যুদ্ধে লিপ্ত পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়াও চীনও তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম সংসদের উচ্চ ও নিম্নকক্ষে (রাজ্যসভা ও লোকসভা) বিশেষ অধিবেশনে জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে একযোগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করছে।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো রাওয়ালপিন্ডিতে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পুরো ক্ষমতা গ্রহণের শর্তে অসামরিক যৌথ মন্ত্রিসভায় বাঙালি প্রধানমন্ত্রীর অধীনে উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণে তিনি রাজি আছেন।

যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া প্রায় এক কোটি শরণার্থীর মানবেতর জীবন নিয়ে উদ্বেগ চোখে পড়ে। তবে, ডিসেম্বরের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ শরণার্থী সংকট থেকে সরে কেন্দ্রীভূত হয় সামরিক সংঘাতের দিকে।

বিজয়ের পতাকা উড়লেই শুরু হয়ে যাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর কাজ। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাবিধি তৈরি, বিদেশ ভ্রমণে ট্রাভেল পাস ইস্যু, মুদ্রানীতি তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রবাসী সরকার হাত দিয়েছিল ডিসেম্বরের আগেই।