পর্ব-২

২০২৫ সালে বিশ্ব রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া ১০টি বড় ঘটনা

জেমস এম. লিন্ডসে
জেমস এম. লিন্ডসে
২০২৫ সালে বিশ্ব রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া ১০টি বড় ঘটনা
ইরানে হামলা চালায় আমেরিকা। ছবি: রয়টার্স

যারা আশা করেছিলেন, ২০২৪ সালের বিশ্বমঞ্চের ক্লান্তিকর পরিস্থিতির পর ২০২৫ কিছুটা স্বস্তি দেবে, তারা শেষ পর্যন্ত হতাশই হয়েছেন। গত বারোটি মাস বিশ্ব রাজনীতির জন্য এক কঠিন সময় ছিল। কারণ, এসময় সংঘাত ও বিরোধ আরও প্রবল হয়ে উঠেছে এবং আমেরিকা-নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার অবসান আরও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়েছে।

২০২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিকের জাঁকজমক আয়োজন যেভাবে সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছিল যে, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় কী অর্জন করতে পারে, ২০২৫ সাল সে তুলনায় অনুপ্রেরণা জাগানোর মতো খুব কম উদাহরণই তৈরি করতে পেরেছে। আমরা এখন কেবল এটাই আশা করতে পারি যে, ২০২৬ সাল আমাদের ইতিবাচক কোনো চমক দেবে।

তবে নতুন বছরে পা রাখার আগে, ২০২৫ সালের ভূ-রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দশটি ঘটনার দিকে আলোকপাত করা যেতে পারে। আজ দ্বিতীয় পর্বে থাকছে আরও ৫টি ঘটনা।

গাজা শান্তি পরিকল্পনায় আমেরিকার মধ্যস্থতা

দুই বছরের ভয়াবহ লড়াইয়ের পর, গত অক্টোবরে ইসরায়েল ও হামাস একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এটি ছিল এই বছরের দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতি। এর আগে জানুয়ারি মাসে বাইডেন প্রশাসন একটি যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করেছিল, যার ফলে গাজায় মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি পায়, হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয় এবং ইসরায়েল প্রায় ২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেয়।

তবে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর শর্তাবলী নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হওয়ায় মার্চ মাসের মাঝামাঝিতে সেই সাময়িক স্বস্তির অবসান হয়। অক্টোবরের এই যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ সৃষ্টিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভূমিকা পালন করেন এবং কাতার, তুরস্ক ও মিশরও মধ্যস্থতায় সহায়তা করে।

এই চুক্তিতে গাজার জন্য তিন পর্যায়ের একটি শান্তি পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়েছে:

১) একটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, যেখানে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী নির্ধারিত সীমারেখায় পিছিয়ে যাবে এবং জিম্মি ও বন্দি বিনিময় করা হবে

২) হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা বাহিনী পাঠানো

৩) ফিলিস্তিনি শাসনব্যবস্থা পুনর্গঠন ও গাজার পুনর্নির্মাণ

আমেরিকা মনে করছে, প্রথম পর্যায় সম্পন্ন হয়েছে, যদিও ইসরায়েল জেদ ধরেছে যে, শেষ ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত তারা দ্বিতীয় পর্যায়ে যাবে না।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ নভেম্বর মাসে গাজা শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন জানায় এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা বাহিনী মোতায়েনের অনুমোদন দেয়। সেই সাথে গাজার দৈনন্দিন শাসনকার্য পরিচালনার জন্য একটি ‘ফিলিস্তিনি কমিটি’ গঠনের আহ্বান জানায়। তবে স্থায়ী শান্তি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। হামাস নিরস্ত্রীকরণের কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না, ইসরায়েল গাজায় পুনরায় হামলা শুরু করেছে এবং এখন পর্যন্ত কোনো দেশই আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা বাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে সৈন্য পাঠাতে সম্মত হয়নি।

ইউরোপে এখনো বন্ধ হয়নি যুদ্ধ। ছবি: রয়টার্স
ইউরোপে এখনো বন্ধ হয়নি যুদ্ধ। ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেন

ইউক্রেন যুদ্ধ, যা এখন চতুর্থ বছরে পদার্পণ করেছে, ২০২৫ সালেও অব্যাহত ছিল। রাশিয়া তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা আরও জোরদার করেছে; তারা বারবার ইউক্রেনের শহরগুলোতে আঘাত হেনেছে, যার ফলে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে ইউক্রেন এক আকস্মিক অভিযানের মাধ্যমে রাশিয়ার যে কুরস্ক প্রদেশ দখল করেছিল, মার্চ মাসে রাশিয়া তা পুনরুদ্ধার করে। তবে ইউক্রেনের অভ্যন্তরে রুশ অগ্রগতি ছিল সামান্যই। ২০২৫ সালে রাশিয়া ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ ১ শতাংশের কম বাড়াতে পেরেছে। এই সামান্য প্রাপ্তির জন্য তাদের ভয়াবহ মূল্য দিতে হয়েছে। রাশিয়া প্রতিদিন প্রায় এক হাজার করে সৈন্য হারিয়েছে। ইউক্রেনের ক্ষয়ক্ষতি এর চেয়ে অনেক কম হলেও তাদের জনসংখ্যা রাশিয়ার তুলনায় মাত্র এক-তৃতীয়াংশ।

জুন মাসে ইউক্রেন ‘অপারেশন স্পাইডারওয়েব’ পরিচালনার মাধ্যমে বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দেয়। এটি ছিল রাশিয়ার অনেক গভীরে পাঁচটি বিমান ঘাঁটিতে চালানো একটি গোপন ড্রোন হামলা। তবে এই আক্রমণ যুদ্ধের মৌলিক গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন করতে পারেনি। বিশেষজ্ঞরা রাশিয়া ও ইউক্রেন আর কতদিন লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে-তা নিয়ে বিতর্ক করছে। যদিও ইউক্রেনের অবস্থান বর্তমানে বেশি নড়বড়ে মনে হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতে, জেতার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি কিয়েভের হাতে নেই এবং তিনি ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তা বাড়ানোর বিরোধী।

অন্যদিকে, ইউরোপ কিয়েভকে উল্লেখযোগ্য আর্থিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান করছে এবং ২০২৫ সালের শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। এই অর্থ আগামী দুই বছরে ইউক্রেনের আর্থিক চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশ পূরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এমন একটি যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে চাপ দিচ্ছেন, যা অনেক বিশেষজ্ঞের মতে রাশিয়ার দিকেই বেশি ঝুঁকে আছে। তা সত্ত্বেও, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত আরও বেশি কিছু পাওয়ার অপেক্ষায় অনড় থাকবেন।

ইসরায়েল-আমেরিকার ইরান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা

কিছু যুদ্ধ যেমন বছর জুড়ে চলে, অন্যগুলো আবার কয়েক দিনেই শেষ হয়। জুন মাসে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সংঘাতটি দ্বিতীয় পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত; যা এখন ‘বারো দিনের যুদ্ধ’ হিসেবে পরিচিত। এই লড়াইয়ের প্রেক্ষাপট দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তৈরি হচ্ছিল। ইসরায়েল দীর্ঘকাল ধরেই ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইসরায়েল-বিরোধী মিলিশিয়াদের প্রতি তেহরানের সমর্থনকে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে আসছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর, ইসরায়েল লেবানন, ইরাক, সিরিয়া এবং ইয়েমেনে ইরানের ছায়া গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানায়। এই অভিযানগুলো ইরানের তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’–এর সক্ষমতাকে পঙ্গু করে দেয়, যা মূলত ইসরায়েলি হামলা ঠেকানোর জন্য তেহরানের প্রধান হাতিয়ার ছিল। ২০২৪ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানা বিধ্বস্ত হয় এবং তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়।

২০২৫ সালের জুন মাসে ইরান যখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যে, তারা দ্রুতই অল্প সংখ্যক অপরিশোধিত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম, ঠিক তখনই ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরু করে। এর মধ্যে ছিল ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক-মিসাইল স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি ও কমান্ড সেন্টারগুলোতে বিমান হামলা এবং সেই সাথে রাজনীতিবিদ, সামরিক নেতা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যাকাণ্ড।

ইরান এর জবাবে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সহায়তায় ইসরায়েল সেই আক্রমণের বেশিরভাগই রুখে দেয়। এরপর ২২ জুন, ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এর অংশ হিসেবে মার্কিন বি-টু বোমারু বিমান এবং টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন’ করে দিয়েছে। তবে ধারণা করা হয়, বোমা পড়ার আগেই ইরান তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলেছিল। ২৪ জুন ইসরায়েল ও ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। এর ফলে লড়াই থামলেও মূল রাজনৈতিক বিরোধগুলো এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

চীন যেভাবে বিরল খনিজকে হাতিয়ার বানিয়েছে

ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদরা ২০২৫ সালকে এমন একটি বছর হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন, যখন চীন নিজেকে আমেরিকার সমকক্ষ মহাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। গত কয়েক দশক ধরে ওয়াশিংটন তার অর্থনৈতিক আধিপত্যকে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণকে তাদের পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহার করে এসেছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল এবং পুনরায় অক্টোবরে বেইজিং দেখিয়ে দিয়েছে যে, তারাও তাদের অর্থনৈতিক সুবিধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে সক্ষম। চীনের ক্ষেত্রে এই প্রভাব খাটানোর মূল জায়গাটি হলো ‘রেয়ার-আর্থ মিনারেলস’ বা বিরল মৃত্তিকা খনিজ, যা শিল্প ও সামরিক ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্যবহারের জন্য অপরিহার্য। চীন গত বহু বছর ধরে বিরল খনিজ পদার্থের সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর আধিপত্য বিস্তারে কাজ করেছে; বর্তমানে বিশ্বের বিরল খনিজ উত্তোলনের প্রায় ৬০ শতাংশ এবং শোধনের প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষমতা তাদের নিয়ন্ত্রণে।

এই আধিপত্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে বেইজিংয়ের পরিকল্পনা কোনো গোপন বিষয় ছিল না। ২০১০ সালে সেনকাকু (বা দাউয়ু) দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে আঞ্চলিক বিরোধের সময় চীন জাপানে বিরল খনিজ রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছিল। সেই সতর্কবার্তা সত্ত্বেও আমেরিকা নিজেকে সুরক্ষায় খুব কম পদক্ষেপই নিয়েছিল। এপ্রিল মাসে ট্রাম্প যখন চীনের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেন, তখন বেইজিং আমেরিকায় চুম্বক এবং সাতটি বিরল খনিজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এক মাসের মধ্যেই ট্রাম্প তার আরোপিত শুল্ক কমিয়ে আনেন। অক্টোবরে ট্রাম্প যখন চীনে উন্নত সেমিকন্ডাক্টর চিপ ও প্রযুক্তি রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করেন, তখন বেইজিং চীনা বিরল খনিজ ব্যবহার করে তৈরি হওয়া পণ্য রপ্তানির ওপর নতুন নীতিমালা জারি করে। মার্কিন অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে ট্রাম্প তার রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করতে বিলম্ব করেন এবং চীনের বিরুদ্ধে নেওয়া আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ বাতিল করেন। এর বিনিময়ে বেইজিং তাদের অক্টোবর মাসের নতুন নীতিমালা কার্যকর করার সময় এক বছর পিছিয়ে দেয়, যা ইঙ্গিত দেয় যে, বিরল খনিজের এই হুমকি এখনো আমেরিকার ওপর ঝুলে আছে।

২০২৫ সালে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল বিরল খনিজ। ছবি: রয়টার্স
২০২৫ সালে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল বিরল খনিজ। ছবি: রয়টার্স

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে ওলটপালট

নিজের কথা রাখা কি সবসময় ভালো কিছু? ২০২৪ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছিলেন যে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ঢেলে সাজাবেন। এখন তিনি বলতে পারেন, “কথা দিয়েছিলাম, কথা রেখেছি।” ক্ষমতা গ্রহণের আগেই তার এই পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গিয়েছিল, যখন তিনি গ্রিনল্যান্ড দখল, কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করা এবং পানামা খালের ওপর পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। অভিষেকের দিনই তিনি আমেরিকাকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সরিয়ে নেন, শরণার্থীদের প্রবেশ সীমিত করেন এবং ড্রাগ কার্টেলগুলোকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেন। ক্ষমতার প্রথম মাসেই তিনি ইউএসএআইডি বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেন, প্রধান ফেডারেল সংস্থাগুলোর স্বাধীন তদারকি ব্যবস্থার অবসান ঘটান এবং সরকারি বেতনভুক্ত কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে ফেলেন।

গত ২ এপ্রিলকে তিনি শুল্কের ‘লিবারেশন ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেন এবং বেশিরভাগ আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন; পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু দেশের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসান। ট্রাম্প দাবি করেন, তার কারণেই ন্যাটো সদস্যরা তাদের জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ে সম্মত হয়েছে এবং আটটি বিদেশি যুদ্ধ শেষ হয়েছে। তবে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে ব্যর্থ হন এবং তার হস্তক্ষেপ-বিরোধী সমর্থকদের অবাক করে দিয়ে ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের হুমকি দেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি একটি 'জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল' প্রকাশ করেন, যা তার এই পদক্ষেপগুলোর একটি কৌশলগত যুক্তি প্রদান করে।

সমালোচকরা ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডে অনেক ভুল খুঁজে পেয়েছেন। তার আরোপিত শুল্ক মার্কিন ভোক্তা ও উৎপাদনকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ট্রাম্প ইউক্রেন শান্তি পরিকল্পনা রাশিয়ার আগ্রাসনকে পুরস্কৃত করেছে এবং যেসব সংঘাত তিনি শেষ করেছেন বলে দাবি করেছেন তার অনেকগুলোই এখনো চলছে। এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা আমলাতন্ত্রকে ছোট করার ফলে মার্কিন সরকার অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, ট্রাম্প ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ (আমেরিকান শান্তি ও বিশ্বব্যবস্থার যুগ)-এর অবসান ঘটিয়েছেন।

লেখক: কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনের (সিএফআর) মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক জৈষ্ঠ্য ফেলো

*লেখাটি সিএফআরে প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে অনুবাদ করেছেন ফাহমিদা শিকদার*

সম্পর্কিত