নিমাই সরকার

ভূ-অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি হওয়া কোনো কম্পন যখন আকস্মিকভাবে ভূ-পৃষ্ঠের কিছু অংশকে ক্ষণিকের জন্য প্রচণ্ড বা মৃদু আন্দোলিত করে, তখন সেটাই হয় ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কোনো অগ্রিম আভাস পাওয়া যায় না। ভূমিকম্প কখন হয় বা হলো তা কাউকে বোঝানোর প্রয়োজন পড়ে না।
হঠাৎ যদি ঘরের কোনো জিনিস দুলতে শুরু করে— যেমন দেয়ালঘড়ি, টাঙানো ছবি বা খাটসহ অন্য যেকোনো আসবাব- বুঝতে হবে ভূমিকম্প হচ্ছে। ভূমিকম্পে বাড়িঘর দুলে ওঠে। জলরাশি নাচতে থাকে। সহজ কথায়, পৃথিবীর কেঁপে ওঠাই ভূমিকম্প। কোনো সময় এমনও মনে হয় দালানকোঠা, গাছগাছালি ঘুরে যাচ্ছে। পায়ের তলা মোচড় খাচ্ছে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে ভূকম্পন তরঙ্গের আকারে স্থিতিস্থাপক ভূত্বকের মধ্য দিয়ে ভূ-পৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়।
তবে এই কম্পন কীভাবে তৈরি হয়, এর অনুষঙ্গগুলোই বা কী, সে সম্পর্কে একটু ধারণা থাকলে ভূমিকম্পের ব্যাখ্যা বুঝতে সহজ হয়। পৃথিবীর ওপরের স্তর তৈরি করে যে প্লেটগুলো দিয়ে তার নাম টেকটোনিক প্লেট। এই প্লেটগুলো মহাসাগরীয় এবং মহাদেশীয় উভয় ধরনের ভূত্বক দিয়ে গঠিত। এগুলো ভাসমান, অনমনীয় এবং কঠিন খণ্ড নিয়ে গঠিত।

এই প্লেটগুলো পৃথিবীর নিচের অংশে থাকা গলিত শিলার স্তরের ওপর ভাসমান অবস্থায় থাকে। এর ফলে প্লেটগুলো ক্রমাগত নড়াচড়া করতে থাকে। যখন দুটি প্লেট একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন এটি পর্বতমালা তৈরি করতে পারে। যেমন ভারত ও ইউরেশীয় প্লেটের সংঘর্ষের ফলে হিমালয় পর্বতমালা গঠিত হয়েছে। প্লেটগুলো বিভিন্ন আকারের হতে পারে, কিছু তো পুরো মহাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটটি সবচেয়ে বড়।
টেকটোনিক প্লেটের সীমানাগুলো প্রায়ই ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু হয়। টেকটোনিক প্লেটগুলো পৃথিবীর পৃষ্ঠের ওপর ধীরে ধীরে নড়াচড়া করে। এদের একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ বা একে অপরের থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে পর্বত, ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির মতো ভূতাত্ত্বিক ঘটনা ঘটে থাকে।
পৃথিবীতে বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়। এগুলোর বেশিরভাগই মৃদু, যেগুলো আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে— প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু। আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়— অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর, ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী এবং ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

তবে ১৫ থেকে ৬৫ কিলোমিটার গভীরতায় ভূমিকম্পের কেন্দ্র অবস্থান করলে তার তীব্রতা সব থেকে বেশি হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে ভূকম্পন তরঙ্গের আকারে স্থিতিস্থাপক ভূত্বকের মধ্য দিয়ে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়। এই যে ভূমিকম্প হয়ে গেল, এর কেন্দ্রস্থল নরসিংদী। গভীরতা ১০ কিলোমিটার। সুতরাং এটার তীব্রতা অনেক অনেক বেশি এবং এর ভয়াবহতা অনিরূপন যোগ্য। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ৫ দশমিক ৭।
ভূমিকম্পের কোনো অগ্রিম বার্তা পাওয়া যায় না। যে অঞ্চলে ভূমিকম্পটি হয়েছে, সেটি ইন্দো-বার্মা টেকটোনিক প্লেটের অংশভুক্ত। ভূমিকম্পটিতে যে তীব্র, যে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে, তা বাংলাদেশের পটভূমিতে এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভূমিকম্পের আতঙ্ক এখন জনমনে। এর জন্য একটা বিহিত প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞের বার্তাও তাই।
আমরা শঙ্কিত, কিন্তু করণীয় নিয়ে চিন্তা করি না। ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্প হতে পারে এবং তার প্রভাব নগরায়ণ, অবকাঠামো, জনসংখ্যা ঘনত্ব এবং প্রশাসনিক অপ্রস্তুতি সবকিছুর ওপর বর্তায়। তাই সময় এখনই– প্রতিটি কম্পনই যেন একটা ডাক হয়ে দাঁড়ায়। তা না হলে এ থেকে হতে পারে এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয়।
লেখক: প্রকৌশলী

ভূ-অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি হওয়া কোনো কম্পন যখন আকস্মিকভাবে ভূ-পৃষ্ঠের কিছু অংশকে ক্ষণিকের জন্য প্রচণ্ড বা মৃদু আন্দোলিত করে, তখন সেটাই হয় ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কোনো অগ্রিম আভাস পাওয়া যায় না। ভূমিকম্প কখন হয় বা হলো তা কাউকে বোঝানোর প্রয়োজন পড়ে না।
হঠাৎ যদি ঘরের কোনো জিনিস দুলতে শুরু করে— যেমন দেয়ালঘড়ি, টাঙানো ছবি বা খাটসহ অন্য যেকোনো আসবাব- বুঝতে হবে ভূমিকম্প হচ্ছে। ভূমিকম্পে বাড়িঘর দুলে ওঠে। জলরাশি নাচতে থাকে। সহজ কথায়, পৃথিবীর কেঁপে ওঠাই ভূমিকম্প। কোনো সময় এমনও মনে হয় দালানকোঠা, গাছগাছালি ঘুরে যাচ্ছে। পায়ের তলা মোচড় খাচ্ছে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে ভূকম্পন তরঙ্গের আকারে স্থিতিস্থাপক ভূত্বকের মধ্য দিয়ে ভূ-পৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়।
তবে এই কম্পন কীভাবে তৈরি হয়, এর অনুষঙ্গগুলোই বা কী, সে সম্পর্কে একটু ধারণা থাকলে ভূমিকম্পের ব্যাখ্যা বুঝতে সহজ হয়। পৃথিবীর ওপরের স্তর তৈরি করে যে প্লেটগুলো দিয়ে তার নাম টেকটোনিক প্লেট। এই প্লেটগুলো মহাসাগরীয় এবং মহাদেশীয় উভয় ধরনের ভূত্বক দিয়ে গঠিত। এগুলো ভাসমান, অনমনীয় এবং কঠিন খণ্ড নিয়ে গঠিত।

এই প্লেটগুলো পৃথিবীর নিচের অংশে থাকা গলিত শিলার স্তরের ওপর ভাসমান অবস্থায় থাকে। এর ফলে প্লেটগুলো ক্রমাগত নড়াচড়া করতে থাকে। যখন দুটি প্লেট একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন এটি পর্বতমালা তৈরি করতে পারে। যেমন ভারত ও ইউরেশীয় প্লেটের সংঘর্ষের ফলে হিমালয় পর্বতমালা গঠিত হয়েছে। প্লেটগুলো বিভিন্ন আকারের হতে পারে, কিছু তো পুরো মহাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটটি সবচেয়ে বড়।
টেকটোনিক প্লেটের সীমানাগুলো প্রায়ই ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু হয়। টেকটোনিক প্লেটগুলো পৃথিবীর পৃষ্ঠের ওপর ধীরে ধীরে নড়াচড়া করে। এদের একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ বা একে অপরের থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে পর্বত, ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির মতো ভূতাত্ত্বিক ঘটনা ঘটে থাকে।
পৃথিবীতে বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়। এগুলোর বেশিরভাগই মৃদু, যেগুলো আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে— প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু। আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়— অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর, ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী এবং ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

তবে ১৫ থেকে ৬৫ কিলোমিটার গভীরতায় ভূমিকম্পের কেন্দ্র অবস্থান করলে তার তীব্রতা সব থেকে বেশি হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে ভূকম্পন তরঙ্গের আকারে স্থিতিস্থাপক ভূত্বকের মধ্য দিয়ে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়। এই যে ভূমিকম্প হয়ে গেল, এর কেন্দ্রস্থল নরসিংদী। গভীরতা ১০ কিলোমিটার। সুতরাং এটার তীব্রতা অনেক অনেক বেশি এবং এর ভয়াবহতা অনিরূপন যোগ্য। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ৫ দশমিক ৭।
ভূমিকম্পের কোনো অগ্রিম বার্তা পাওয়া যায় না। যে অঞ্চলে ভূমিকম্পটি হয়েছে, সেটি ইন্দো-বার্মা টেকটোনিক প্লেটের অংশভুক্ত। ভূমিকম্পটিতে যে তীব্র, যে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে, তা বাংলাদেশের পটভূমিতে এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভূমিকম্পের আতঙ্ক এখন জনমনে। এর জন্য একটা বিহিত প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞের বার্তাও তাই।
আমরা শঙ্কিত, কিন্তু করণীয় নিয়ে চিন্তা করি না। ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্প হতে পারে এবং তার প্রভাব নগরায়ণ, অবকাঠামো, জনসংখ্যা ঘনত্ব এবং প্রশাসনিক অপ্রস্তুতি সবকিছুর ওপর বর্তায়। তাই সময় এখনই– প্রতিটি কম্পনই যেন একটা ডাক হয়ে দাঁড়ায়। তা না হলে এ থেকে হতে পারে এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয়।
লেখক: প্রকৌশলী

চীন বর্তমানে তার সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে বিতর্কিত অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর একটি নির্মাণ করছে। আর সেটি হলো ইয়ারলুং জাংবো নদের ওপর একটি বিশাল জলবিদ্যুৎ ব্যবস্থা। এই প্রকল্পের প্রভাব ভারত ও বাংলাদেশের ওপর সুদূরপ্রসারী হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মানুষের জীবন ও পরিবেশের