চরচা প্রতিবেদক

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বাতাসের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ২ নভেম্বর একটি ঐতিহাসিক দিন হওয়ার কথা ছিল। কারণ, সেদিন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বেশকিছু সরকারি দপ্তরের প্রধানদের অংশগ্রহণে এক সভায় সমন্বিত উদ্যেগে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
কার্যত, ৬ নভেম্বর থেকে এই প্রতিবেদন লেখার দিন (২৩ নভেম্বর) পর্যন্ত ঢাকার বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল, যা পরিবেশ অধিদপ্তরের দিন-ভিত্তিক বায়ুমান প্রতিবেদন একিউআই দেখলেই জানা যায়।
উপদেষ্টা রিজওয়ানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সমন্বিত উদ্যোগে যে কাজগুলোর কথা বলা হয়েছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহন ও ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, নির্মাণসামগ্রী, বিশেষ করে বালু খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত রাখার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং সড়কে পানি ছিটানো।
তবে বায়ুমান বিশ্লষকগণ মনে করেন, কোনো স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থাই ঢাকা মহানগরের বাতাসকে নির্মল করতে সফল হবে না। তাদের পরামর্শ হলো–বায়ুমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ঢাকার বায়ুদূষণ মোকাবিলায় একটি সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।

সম্প্রতি সৈয়দা রিজওয়ানা এই প্রতিবেদকের কাছে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, এই দেশে শীতকালেই ইট পোড়ানোর মৌসুম শুরু হয়, রাস্তা খুড়ে উন্নয়ন কাজ করতে হয়, আবার এই শীতকালেই বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যায় নানা কারণে।
রিজওয়ানা বলেন, “তারপরও, কাজ (বায়ুদূষণবিরোধী অভিযান) শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে এই কাজকে নিজেদের কাজ মনে করে অত্যন্ত জোরেশোরে এগিয়ে নিতে হবে।”
প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমের আগমনের সাথে সাথে ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান শহর ও শিল্পাঞ্চলগুলোতে বাতাস অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়মিতই বায়ুদূষণবিরোধী অভিযান চালালেও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয় না।
এমনই এক প্রেক্ষাপটে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা ঢাকাসহ সারা দেশে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে যৌথভাবে মাঠে নামার নির্দেশ দেন। উক্ত সভায় পরিবেশ মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশনার মধ্যে ছিল সাভার ও আশুলিয়ার সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা, খোলা আকাশের নিচে নির্মাণসামগ্রীর মজুত ঠেকানো, শুকনো পাতা ও আবর্জনা পোড়ানো বন্ধ করা, ঢাকার সড়ক বিভাজকে গাছ রোপণ এবং সিটি করপোরেশনের সড়কগুলোতে নিয়মিত পানি ছিটিয়ে ভাসমান ধুলো নিয়ন্ত্রণ করা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন প্রয়োগ শাখার তথ্য অনুযায়ী, ৩ থেকে ১৯ নভেম্বরের মধ্যে ঢাকা জেলার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, শ্যামলী, কাকরাইল, টিকাটুলি, আজিমপুর ও সাভার এলাকায় অন্তত নয়টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়।

মোবাইল কোর্টে কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী মোটরযান ও ইটভাটার বিরুদ্ধে অন্তত ৩৪টি মামলা করা হয় এবং ২,৭৯,৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
অন্যদিকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৫, ২২ ও ২৩ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় সড়কে ধুলো দমনে প্রায় ৭০,০০০ লিটার পানি ছিটায় ঢাকা ওয়াসা। একই সময়কালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ত্রিপল দিয়ে উন্মুক্ত স্থানে রাখা নির্মাণসামগ্রী ঢেকে দেয়। অভিযান পরিচালিত হয়েছে–এমন স্থানের মধ্যে অন্যতম একটি ছিল আগারগাঁও মোড়, যেখানে নির্মাণাধীন জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের নির্মাণসামগ্রীগুলো খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর নেতৃত্বে আছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। গত ২৩ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সবুজায়নের জন্য উপযোগী স্থানগুলো শনাক্ত করেন। এসব তথ্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছ থেকে পাওয়া।
তিনি আরও জানান, সাভার ও আশুলিয়ায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা, খোলা স্থানে নির্মাণসামগ্রী রাখা বন্ধ করা এবং ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহনকে জরিমানা করা–এ ধরনের নানা উদ্যোগ পুলিশ, রাজউক, বিআরটিএ ও অন্যান্য সংস্থার সহায়তায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
কিন্তু এসব উদ্যোগের ফলাফল কী? খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরের একিউআই বলছে, ঢাকার বাতাসে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অতিক্ষুদ্র কণার ঘনত্ব বেড়েই চলেছে। আড়াই মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট এ কণা পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম (২.৫) নামে পরিচিত।
পরিবেশ অধিদপ্তর পিএম (২.৫) সহ পাঁচটি প্রধান বায়ুদূষকের ঘনত্ব বিশ্লেষণ করে সার্বক্ষণিক বাতাসে দুষণের মাত্রা নির্ধারণ করে, যা আমরা একিউআই হিসেবে জানি।
কোনো স্থানের একিউআই–এর মান ১৫১ থেকে ২০০–এর মধ্যে থাকলে, ওই স্থানের বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়।
উল্লেখ্য, পিএম (২.৫) হলো ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট বাতাসে ভাসমান কণা বা পারটিকুলেট ম্যাটার। এই কণাগুলো খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে।
২০২৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পিএম (২.৫)–এর মাত্রার তারতম্য ভূমি ব্যবহারের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কোনো স্থানে জলাধার ও সুবজ ভূমির পরিমাণ কমে গেলে এবং কঙ্ক্রিট দ্বারা আচ্ছাদিত ও অনাবাদি জমির পরিমাণ বেড়ে গেলে সেখানে এ ধরনের কণার ঘনত্ব বেড়ে যায়।

উক্ত গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরে জলাধার ও সুবজ ভূমির পরিমাণ যথাক্রমে ২ শতাংশ ও ৫.৩ শতাংশ কমে গেছে। আর কংক্রিট দ্বারা আচ্ছাদিত ও অনাবাদি জমি যথাক্রমে ৪ শতাংশ ও ৩.৪ শতাংশ হারে বেড়েছে।
দেখা যাচ্ছে, পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশনা দেওয়ার পর দুই সপ্তাহের বেশি সময় পার হলেও দরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে ঢাকা মহানগরীর বাতাস যে ‘অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল, সেই অবস্থাতেই আছে।
কোনো এলাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ থাকলে সেখানে বসবাসকারী সবাই স্বাস্থ্যগত সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষ করে যারা শিশু ও প্রবীণ, এমন সংবেদনশীল মানুষদের ওপর ‘অস্বাস্থ্যকর’ বাতাসে নিশ্বাস নেওয়ার প্রভাব বেশ গুরুতর হতে পারে।
বাংলাদেশের, বিশেষ করে মহানগরীতে পিএম (২.৫)–এর ঘনত্ব কতটা মানসম্পন্ন, তা বোঝা যায় ২০২৫ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায়। ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বায়ুমান বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখতে পান, শীতকালে বাংলাদেশের ৬৪টি শহরে এ ধরনের কণার মাত্রা ৫৫.১২ থেকে ১৫৯.৪২ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটারের মধ্যে ছিল, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বায়ুমান সংক্রান্ত মানদণ্ডের (বার্ষিক গড় ≤ ৫ µg/m³) তুলনায় ১১ থেকে ৩২ গুণ বেশি এবং বাংলাদেশ ন্যাশলাল এমবিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড (বার্ষিক গড় ≤ ১৫ µg/m³) এর তুলনায় ৪ থেকে ১১ গুণ বেশি।
তো বাতাসে অতিরিক্ত মাত্রায় পিএম (২.৫) না থাকলে কী হতে পারে? ২০২৫ সালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণাপত্র বলছে, বাংলাদেশে এ দূষণ উল্লেখযোগ্য হারে কমানো গেলে প্রতি বছর হৃদরোগ, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও ফুসফুসের ক্যানসার–সংক্রান্ত প্রায় এক লাখ মৃত্যুর ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। উক্ত গবেষণাপত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর পাঁচ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয় শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে থাকলে যার হার কমানো যায়।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা এ দেশে নতুন নয়। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীতে তো নয়ই। ঢাকার বাতাসের মান ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে দৃশ্যত অবনতি হতে থাকে। ওই সময়ে পিএম (২.৫)–কে মারাত্মক বায়ুদূষক হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
এ অবস্থার মোকাবিলায় ২০০০ সালে তৎকালীন সরকার ‘এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট’ (একিউএমপি) চালু করে। প্রকল্পটির ব্যয় ছিল প্রায় ৭৭.৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে বিশ্বব্যাংক ৭০.২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ হিসেবে বাংলাদেশকে দেয়।
ঢাকাকেন্দ্রিক এই একিউএমপি প্রকল্পে বায়ুদূষণের প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত হয় ডিজেল-চালিত যানবাহন, ছোট শিল্পকারখানা, ইটভাটা, আবর্জনা পোড়ানো ও রাস্তার ধুলো। এ প্রকল্প ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর ছিল। পরে এর দ্বিতীয় ধাপ ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনার্জি (কেস) নামে পুনরায় চালু হয় ২০১০ সালে। প্রকল্পের নয় বছরে বিশ্বব্যাংক ৮৭.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করে, যা ছিল প্রায় পুরো প্রকল্পের ব্যয়।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেস প্রকল্পের অর্থে ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বায়ুদূষণ শনাক্তকরণ ও এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে প্রায় ৩০০ সরকারি কর্মকর্তা বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।
এসব ভ্রমণ থেকে কী পেল বাংলাদেশ? এর উত্তর আছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির একটি মন্তব্যে। ২০১৯ সালে CASE প্রকল্পটি সমাপ্ত হলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি মন্তব্য করে যে, প্রকল্পটি এর মূল লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
বায়ুমানের কোন উন্নতি না হওয়ায় ২০১৯ সালেই আইনজীবী মনজিল মোরশেদ হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেন বায়ুদূষণবিরোধী আইন প্রয়োগের নির্দেশনা চেয়ে। পরের বছরের ১৩ জানুয়ারি আদালত নয় দফা নির্দেশনা দেন। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, আবর্জনা ও নির্মাণসামগ্রী ঢেকে পরিবহন করা, নির্মাণাধীন স্থানে এসব সামগ্রী ঢেকে রাখা, সিটি করপোরেশনগুলোর সড়কে পানি ছিটানো এবং দূষণকারী ‘আনফিট’ যানবাহন রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলা।
২০২০ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো পাঁচ বছর পরও একইভাবে প্রাসঙ্গিক। কারণ, নিদের্শনাগুলো যথাযথ ও ধারাবাহিকভাবে প্রতিপালিত হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ও বায়ুদূষণ নিয়ে গবেষণাকারী একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দলের সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, “কিছু ইটভাটা আধুনিকায়ন ছাড়া বায়ুদূষণবিরোধী প্রকল্পের অন্যান্য উপাদানগুলো বায়ুদূষণ রোধে সরাসরি কোনো অবদান রাখেনি। এ জন্যই পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি, বরং সংকট আরও তীব্র হয়েছে।”
এ গবেষণা অনুযায়ী, দেশের মোট বায়ুদূষণের ৭০ শতাংশ ঘটে অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ডের কারণে। আর বাকি অংশ ঘটে আন্তর্জাতিক সীমান্ত–অতিক্রমকারী দূষক থেকে।

সম্প্রতি তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, “বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় পরিকল্পনা ও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
আব্দুস সালামের মতে, বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকার কোনো এক সড়কে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে গুটিকয়েক যানবাহনকে কালো ধোঁয়া ছাড়ার অপরাধে একদিনের জন্য জরিমানা করে বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “আমাদের ক্লিন এনার্জি নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে ভাবতে হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ব্যপক উন্নতি সাধন করতে হবে। আবর্জনা যেন কোথাও কেউ পোড়াতে না পারে, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। জরাজীর্ণ মোটরযান পর্যায়ক্রমে চিরতরে রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। নইলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।”

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বাতাসের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ২ নভেম্বর একটি ঐতিহাসিক দিন হওয়ার কথা ছিল। কারণ, সেদিন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বেশকিছু সরকারি দপ্তরের প্রধানদের অংশগ্রহণে এক সভায় সমন্বিত উদ্যেগে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
কার্যত, ৬ নভেম্বর থেকে এই প্রতিবেদন লেখার দিন (২৩ নভেম্বর) পর্যন্ত ঢাকার বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল, যা পরিবেশ অধিদপ্তরের দিন-ভিত্তিক বায়ুমান প্রতিবেদন একিউআই দেখলেই জানা যায়।
উপদেষ্টা রিজওয়ানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সমন্বিত উদ্যোগে যে কাজগুলোর কথা বলা হয়েছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহন ও ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, নির্মাণসামগ্রী, বিশেষ করে বালু খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত রাখার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং সড়কে পানি ছিটানো।
তবে বায়ুমান বিশ্লষকগণ মনে করেন, কোনো স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থাই ঢাকা মহানগরের বাতাসকে নির্মল করতে সফল হবে না। তাদের পরামর্শ হলো–বায়ুমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ঢাকার বায়ুদূষণ মোকাবিলায় একটি সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।

সম্প্রতি সৈয়দা রিজওয়ানা এই প্রতিবেদকের কাছে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, এই দেশে শীতকালেই ইট পোড়ানোর মৌসুম শুরু হয়, রাস্তা খুড়ে উন্নয়ন কাজ করতে হয়, আবার এই শীতকালেই বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যায় নানা কারণে।
রিজওয়ানা বলেন, “তারপরও, কাজ (বায়ুদূষণবিরোধী অভিযান) শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে এই কাজকে নিজেদের কাজ মনে করে অত্যন্ত জোরেশোরে এগিয়ে নিতে হবে।”
প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমের আগমনের সাথে সাথে ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান শহর ও শিল্পাঞ্চলগুলোতে বাতাস অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়মিতই বায়ুদূষণবিরোধী অভিযান চালালেও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয় না।
এমনই এক প্রেক্ষাপটে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা ঢাকাসহ সারা দেশে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে যৌথভাবে মাঠে নামার নির্দেশ দেন। উক্ত সভায় পরিবেশ মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশনার মধ্যে ছিল সাভার ও আশুলিয়ার সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা, খোলা আকাশের নিচে নির্মাণসামগ্রীর মজুত ঠেকানো, শুকনো পাতা ও আবর্জনা পোড়ানো বন্ধ করা, ঢাকার সড়ক বিভাজকে গাছ রোপণ এবং সিটি করপোরেশনের সড়কগুলোতে নিয়মিত পানি ছিটিয়ে ভাসমান ধুলো নিয়ন্ত্রণ করা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন প্রয়োগ শাখার তথ্য অনুযায়ী, ৩ থেকে ১৯ নভেম্বরের মধ্যে ঢাকা জেলার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, শ্যামলী, কাকরাইল, টিকাটুলি, আজিমপুর ও সাভার এলাকায় অন্তত নয়টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়।

মোবাইল কোর্টে কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী মোটরযান ও ইটভাটার বিরুদ্ধে অন্তত ৩৪টি মামলা করা হয় এবং ২,৭৯,৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
অন্যদিকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৫, ২২ ও ২৩ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় সড়কে ধুলো দমনে প্রায় ৭০,০০০ লিটার পানি ছিটায় ঢাকা ওয়াসা। একই সময়কালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ত্রিপল দিয়ে উন্মুক্ত স্থানে রাখা নির্মাণসামগ্রী ঢেকে দেয়। অভিযান পরিচালিত হয়েছে–এমন স্থানের মধ্যে অন্যতম একটি ছিল আগারগাঁও মোড়, যেখানে নির্মাণাধীন জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের নির্মাণসামগ্রীগুলো খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর নেতৃত্বে আছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। গত ২৩ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সবুজায়নের জন্য উপযোগী স্থানগুলো শনাক্ত করেন। এসব তথ্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছ থেকে পাওয়া।
তিনি আরও জানান, সাভার ও আশুলিয়ায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা, খোলা স্থানে নির্মাণসামগ্রী রাখা বন্ধ করা এবং ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহনকে জরিমানা করা–এ ধরনের নানা উদ্যোগ পুলিশ, রাজউক, বিআরটিএ ও অন্যান্য সংস্থার সহায়তায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
কিন্তু এসব উদ্যোগের ফলাফল কী? খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরের একিউআই বলছে, ঢাকার বাতাসে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অতিক্ষুদ্র কণার ঘনত্ব বেড়েই চলেছে। আড়াই মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট এ কণা পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম (২.৫) নামে পরিচিত।
পরিবেশ অধিদপ্তর পিএম (২.৫) সহ পাঁচটি প্রধান বায়ুদূষকের ঘনত্ব বিশ্লেষণ করে সার্বক্ষণিক বাতাসে দুষণের মাত্রা নির্ধারণ করে, যা আমরা একিউআই হিসেবে জানি।
কোনো স্থানের একিউআই–এর মান ১৫১ থেকে ২০০–এর মধ্যে থাকলে, ওই স্থানের বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়।
উল্লেখ্য, পিএম (২.৫) হলো ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট বাতাসে ভাসমান কণা বা পারটিকুলেট ম্যাটার। এই কণাগুলো খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে।
২০২৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পিএম (২.৫)–এর মাত্রার তারতম্য ভূমি ব্যবহারের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কোনো স্থানে জলাধার ও সুবজ ভূমির পরিমাণ কমে গেলে এবং কঙ্ক্রিট দ্বারা আচ্ছাদিত ও অনাবাদি জমির পরিমাণ বেড়ে গেলে সেখানে এ ধরনের কণার ঘনত্ব বেড়ে যায়।

উক্ত গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরে জলাধার ও সুবজ ভূমির পরিমাণ যথাক্রমে ২ শতাংশ ও ৫.৩ শতাংশ কমে গেছে। আর কংক্রিট দ্বারা আচ্ছাদিত ও অনাবাদি জমি যথাক্রমে ৪ শতাংশ ও ৩.৪ শতাংশ হারে বেড়েছে।
দেখা যাচ্ছে, পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশনা দেওয়ার পর দুই সপ্তাহের বেশি সময় পার হলেও দরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে ঢাকা মহানগরীর বাতাস যে ‘অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল, সেই অবস্থাতেই আছে।
কোনো এলাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ থাকলে সেখানে বসবাসকারী সবাই স্বাস্থ্যগত সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষ করে যারা শিশু ও প্রবীণ, এমন সংবেদনশীল মানুষদের ওপর ‘অস্বাস্থ্যকর’ বাতাসে নিশ্বাস নেওয়ার প্রভাব বেশ গুরুতর হতে পারে।
বাংলাদেশের, বিশেষ করে মহানগরীতে পিএম (২.৫)–এর ঘনত্ব কতটা মানসম্পন্ন, তা বোঝা যায় ২০২৫ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায়। ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বায়ুমান বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখতে পান, শীতকালে বাংলাদেশের ৬৪টি শহরে এ ধরনের কণার মাত্রা ৫৫.১২ থেকে ১৫৯.৪২ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটারের মধ্যে ছিল, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বায়ুমান সংক্রান্ত মানদণ্ডের (বার্ষিক গড় ≤ ৫ µg/m³) তুলনায় ১১ থেকে ৩২ গুণ বেশি এবং বাংলাদেশ ন্যাশলাল এমবিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড (বার্ষিক গড় ≤ ১৫ µg/m³) এর তুলনায় ৪ থেকে ১১ গুণ বেশি।
তো বাতাসে অতিরিক্ত মাত্রায় পিএম (২.৫) না থাকলে কী হতে পারে? ২০২৫ সালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণাপত্র বলছে, বাংলাদেশে এ দূষণ উল্লেখযোগ্য হারে কমানো গেলে প্রতি বছর হৃদরোগ, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও ফুসফুসের ক্যানসার–সংক্রান্ত প্রায় এক লাখ মৃত্যুর ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। উক্ত গবেষণাপত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর পাঁচ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয় শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে থাকলে যার হার কমানো যায়।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা এ দেশে নতুন নয়। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীতে তো নয়ই। ঢাকার বাতাসের মান ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে দৃশ্যত অবনতি হতে থাকে। ওই সময়ে পিএম (২.৫)–কে মারাত্মক বায়ুদূষক হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
এ অবস্থার মোকাবিলায় ২০০০ সালে তৎকালীন সরকার ‘এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট’ (একিউএমপি) চালু করে। প্রকল্পটির ব্যয় ছিল প্রায় ৭৭.৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে বিশ্বব্যাংক ৭০.২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ হিসেবে বাংলাদেশকে দেয়।
ঢাকাকেন্দ্রিক এই একিউএমপি প্রকল্পে বায়ুদূষণের প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত হয় ডিজেল-চালিত যানবাহন, ছোট শিল্পকারখানা, ইটভাটা, আবর্জনা পোড়ানো ও রাস্তার ধুলো। এ প্রকল্প ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর ছিল। পরে এর দ্বিতীয় ধাপ ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনার্জি (কেস) নামে পুনরায় চালু হয় ২০১০ সালে। প্রকল্পের নয় বছরে বিশ্বব্যাংক ৮৭.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করে, যা ছিল প্রায় পুরো প্রকল্পের ব্যয়।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেস প্রকল্পের অর্থে ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বায়ুদূষণ শনাক্তকরণ ও এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে প্রায় ৩০০ সরকারি কর্মকর্তা বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।
এসব ভ্রমণ থেকে কী পেল বাংলাদেশ? এর উত্তর আছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির একটি মন্তব্যে। ২০১৯ সালে CASE প্রকল্পটি সমাপ্ত হলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি মন্তব্য করে যে, প্রকল্পটি এর মূল লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
বায়ুমানের কোন উন্নতি না হওয়ায় ২০১৯ সালেই আইনজীবী মনজিল মোরশেদ হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেন বায়ুদূষণবিরোধী আইন প্রয়োগের নির্দেশনা চেয়ে। পরের বছরের ১৩ জানুয়ারি আদালত নয় দফা নির্দেশনা দেন। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, আবর্জনা ও নির্মাণসামগ্রী ঢেকে পরিবহন করা, নির্মাণাধীন স্থানে এসব সামগ্রী ঢেকে রাখা, সিটি করপোরেশনগুলোর সড়কে পানি ছিটানো এবং দূষণকারী ‘আনফিট’ যানবাহন রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলা।
২০২০ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো পাঁচ বছর পরও একইভাবে প্রাসঙ্গিক। কারণ, নিদের্শনাগুলো যথাযথ ও ধারাবাহিকভাবে প্রতিপালিত হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ও বায়ুদূষণ নিয়ে গবেষণাকারী একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দলের সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, “কিছু ইটভাটা আধুনিকায়ন ছাড়া বায়ুদূষণবিরোধী প্রকল্পের অন্যান্য উপাদানগুলো বায়ুদূষণ রোধে সরাসরি কোনো অবদান রাখেনি। এ জন্যই পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি, বরং সংকট আরও তীব্র হয়েছে।”
এ গবেষণা অনুযায়ী, দেশের মোট বায়ুদূষণের ৭০ শতাংশ ঘটে অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ডের কারণে। আর বাকি অংশ ঘটে আন্তর্জাতিক সীমান্ত–অতিক্রমকারী দূষক থেকে।

সম্প্রতি তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, “বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় পরিকল্পনা ও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
আব্দুস সালামের মতে, বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকার কোনো এক সড়কে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে গুটিকয়েক যানবাহনকে কালো ধোঁয়া ছাড়ার অপরাধে একদিনের জন্য জরিমানা করে বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “আমাদের ক্লিন এনার্জি নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে ভাবতে হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ব্যপক উন্নতি সাধন করতে হবে। আবর্জনা যেন কোথাও কেউ পোড়াতে না পারে, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। জরাজীর্ণ মোটরযান পর্যায়ক্রমে চিরতরে রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। নইলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।”

বস্তিগুলোতে আগুন লাগার মূল কারণ হচ্ছে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত বৈদ্যুতিক সংযোগ, নিয়ম না মেনে সিলিন্ডার বা লাইন গ্যাসের অনিরাপদ ব্যবহার, বিড়ি-সিগারেট, মশার কয়েল ও খোলা বাতির ব্যবহার, উন্মুক্ত চুলা ও হিটারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার। উদাসীনতা ও অসাবধানতা এই ঝুঁকি আরও বাড়ায়

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে কথা বলেছেন তার আইনজীবী মোরশেদ হোসেন। তিনি বলেন, “কারাগারে সাধন চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তিনি কেবল সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদের মৃত্যুর প্রসঙ্গে কথা বলতে থাকেন। নুরুল মজিদের মৃত্যু অন্য নেতাদের ভীষণ চিন্ত