হিজবুল্লাহ কী, এদের কাজ কী?

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
হিজবুল্লাহ কী, এদের কাজ কী?
হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের প্যারেডের স্ক্যাচ। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

হিজবুল্লাহ লেবানভিত্তিক একটি শিয়া মুসলিম রাজনৈতিক ও সামরিক সংগঠন। তারা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত।

ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনটির মূল লক্ষ্য ইসরায়েলের অস্তিত্বের বিরোধিতা করা এবং ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার করা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েলসহ অনেক দেশ হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দেখে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, হিজবুল্লাহ ১৯৮২ সালে লেবাননের গৃহযুদ্ধ চলাকালীন ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য গঠিত হয়। হিজবুল্লাহ একটি আরবি ভাষার শব্দ, যার অর্থ ‘আল্লাহর দল’। শুরুতে তাদের লক্ষ্য ছিল লেবাননে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং ইসরায়েলকে ধ্বংস করা।

২০০০ সালে ইসরায়েল দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করলে, হিজবুল্লাহ এটিকে নিজেদের বিজয় হিসেবে প্রচার করে। এসময় দলটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। তবে তারা অস্ত্র সমর্পণ না করে সীমান্ত এলাকায় সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখে।

২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর হামলায় দুই ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হলে ইসরায়েল ব্যাপক আক্রমণ চালায়। ৩৪ দিনের সেই যুদ্ধে ১ হাজার ১২৫ লেবাননের নাগরিক ও ১৬৪ ইসরায়েলি নিহত হয়। যুদ্ধের পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি রেজুলেশন পাস হয়। যাতে হিজবুল্লাহকে দক্ষিণ লেবানন থেকে সরিয়ে নেওয়া ও নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু সংগঠনটি তা মানেনি।

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা। ছবি: সংগৃহীত

হিজবুল্লাহর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ছিলেন হাসান নাসরাল্লাহ। গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর তাকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর হিজবুল্লাহ ইসরায়েল সীমান্তে রকেট হামলা চালায়। ইসরায়েল পাল্টা বিমান হামলা শুরু করে, যা ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ সংঘাতে রূপ নেয়।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে ইসরায়েল ঘোষণা দেয় যে, তারা দক্ষিণ লেবাননের সেই এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়, যেখান থেকে হাজার হাজার ইসরায়েলি নাগরিক হিজবুল্লাহর হামলার কারণে ঘরছাড়া হয়েছে। এরপর ইসরায়েল ব্যাপক আকাশ হামলা চালিয়ে স্থল অভিযান শুরু করে।

এই অভিযানে প্রায় ৪ হাজার লেবাননের নাগরিক নিহত হয়, যাদের মধ্যে বহু বেসামরিক নাগরিকও ছিল। অক্টোবর ২০২৩ থেকে নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে প্রায় দশ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। ইসরায়েলেরও ৪৫ বেসামরিক ও ৭৫ সৈন্য নিহত হয়েছে বলে জানা যায়। গত বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।

হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর সংগঠনের উপপ্রধান নাইম কাসেম নতুন নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন। ইরান দীর্ঘদিন ধরে হিজবুল্লাহকে অর্থ, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে।

ইসরায়েলের সঙ্গে সবশেষ সংঘাতের আগে হিজবুল্লাহর যোদ্ধার সংখ্যা ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে ছিল বলে ধারণা করা হয়। তাদের কাছে প্রায় দুই লাখ রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছিল, যার বেশিরভাগই ইরান থেকে সরবরাহ করা। তবে সাম্প্রতিক যুদ্ধে সংগঠনটি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সেনাপ্রধান জোসেফ আউন দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ঘোষণা দেন যে, ‘রাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোনো পক্ষের অস্ত্র ধারণের অধিকার নেই।’ এটি হিজবুল্লাহর প্রতি সরাসরি ইঙ্গিত। নতুন সরকারেও হিজবুল্লাহকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

যদিও হিজবুল্লাহ লেবাননের অনেক শিয়া মুসলিমের কাছে এখনও প্রতিরোধের প্রতীক, তবে সাম্প্রতিক সংঘাতে তারা সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবাননে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো শান্তি বজায় রাখা এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব পুনর্গঠন করা।

সম্পর্কিত