আহমেদ ইয়াসির আবরার

বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার এখন তুঙ্গে। এর বড় একটি অংশ দখল করে আছে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বিজ্ঞাপন। নির্বাচনী প্রচারের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া নিষিদ্ধ বা অবৈধ না হলেও মেটাসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে, যা মেনে চলা বাধ্যতামূলক।
মেটার নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী, রাজনীতি সংশ্লিষ্ট যেকোনো বিজ্ঞাপনে এর পৃষ্ঠপোষক বা অর্থায়নকারীর নাম ও পরিচয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে মেটার স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের মাধ্যমে সেই বিজ্ঞাপন শনাক্ত হওয়া এবং দ্রুত সরিয়ে ফেলার কথা। তবে ‘ডিসমিসল্যাব’-এর একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মেটা সবসময় এই ধরনের প্রচারণামূলক কনটেন্ট শনাক্ত করতে এবং ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এটি মেটার স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থার ত্রুটিকেই নির্দেশ করছে।
বাংলাদেশ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই ধরনের ডিজিটাল প্রচারণার স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় ভুল তথ্য রোধ ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে মেটার মতো বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে।
এই অনুসন্ধানের জন্য ডিসমিসল্যাব গত ৭ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেটার ‘অ্যাড লাইব্রেরি’ বিশ্লেষণ করেছে। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা নেতার নাম ব্যবহার করা অন্তত ৫০২টি প্রচারণামূলক কনটেন্ট পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অন্তত ৪১টি বিজ্ঞাপনকে মেটা তাদের নীতিমালা অনুযায়ী ‘রাজনৈতিক, নির্বাচনী বা সামাজিক ইস্যু’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া অন্তত ৩২টি বিজ্ঞাপনে কোনো প্রকার বাধ্যতামূলক ডিসক্লেইমার বা পরিচয় ছাড়াই সরাসরি রাজনৈতিক দল, তাদের কর্মসূচি অথবা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের প্রচার চালানো হয়েছে।
সরাসরি রাজনৈতিক বার্তার পাশাপাশি এই অনুসন্ধানে এমন অন্তত ৪২টি বিজ্ঞাপনের খোঁজ পাওয়া গেছে, যেখানে বিভিন্ন বাণিজ্যিক পণ্য যেমন—টি-শার্ট, ক্যাপ, হুডি এবং বই বিক্রির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের নাম বা লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। মেটার নীতিমালা অনুযায়ী, এই ধরনের বিজ্ঞাপনেও ‘ডিসক্লেইমার’বা পরিচয় প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক।
অনুসন্ধানে এমন কিছু ঘটনা নথিবদ্ধ করা হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে, ডিসক্লেইমার না থাকায় একটি বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলা হলেও হুবহু একই ধরনের অন্য বিজ্ঞাপনগুলো ঠিকই সচল রয়েছে। বিষয়টি মেটার স্বয়ংক্রিয় বিজ্ঞাপন শনাক্তকরণ ব্যবস্থার (Automated ad detection system) দুর্বলতা ও অসামঞ্জস্যতাকে পুনরায় সামনে এনেছে।
শনাক্তকরণ এড়িয়ে চলছে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন
অনেক ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনদাতারা রাজনৈতিক দলের নাম এবং তাদের নির্বাচনী প্রতীক ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন প্রচার করলেও মেটা তার নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী সেগুলোকে রাজনৈতিক হিসেবে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এই বিজ্ঞাপনগুলো সাধারণ কনটেন্ট হিসেবে প্রচারিত হয়েছে।
মেটার নিয়ম অনুযায়ী, প্রচারণার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সাধারণ বিজ্ঞাপনগুলো তাদের অ্যাড লাইব্রেরি থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যায়। কিন্তু রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনগুলো ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি বিজ্ঞাপনে ঢাকা-১৫ আসনে জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতাদের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিজয় নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল। বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল–“ঢাকা-১৫ আসনে এনসিপি-র প্রচারণা চলছে। জনতার প্রতীক, শাপলা কলি প্রতীক। গ্রাম থেকে শহরের অলিগলি, এবার জিতবে শাপলা কলি। ইনশাআল্লাহ, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি–এনসিপি।”বিজ্ঞাপনে সরাসরি একটি দল ও তার নির্বাচনী প্রতীকের উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও মেটা এটিকে রাজনৈতিক ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বিজ্ঞাপনটি এখন আর অ্যাড লাইব্রেরিতে দেখা যাচ্ছে না।
অন্য আরেকটি বিজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, দলটির প্রার্থী এবং দলের মধ্যে তার পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, “সংসদীয় প্রার্থী–১৪৭ ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর), আমির, গৌরীপুর উপজেলা, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।”পর্যালোচনায় দেখা যায়, মেটা এটিকে একটি সাধারণ বিজ্ঞাপন হিসেবে গণ্য করেছে এবং তাই এটি আর অ্যাড লাইব্রেরিতে নেই।
তৃতীয় একটি বিজ্ঞাপন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একজন সিনিয়র নেতার অফিসিয়াল পেজ থেকে পোস্ট করা হয়েছিল, যিনি পঞ্চগড়-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এতে বলা হয়েছে–“
হার্ভার্ড-অক্সফোর্ডের আন্তর্জাতিক জ্ঞান এবং পঞ্চগড়ের মাটি থেকে উঠে আসা অভিজ্ঞতা, কারণ বাংলাদেশের জন্য নীতি নির্ধারণে অবশ্যই মাটি থেকে উঠে আসা অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগাতে হবে।”
বিজ্ঞাপনের শেষ লাইনে সরাসরি ভোটারদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কীভাবে তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন–“সঠিক ও কার্যকর নীতি বাস্তবায়নে সঠিক নেতৃত্বকে ভোট দিন।।”
মেটার নীতিমালা অনুযায়ী, সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তার ক্ষেত্রে অর্থায়নকারীর তথ্য প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই বিজ্ঞাপনে তা করা হয়নি এবং তবুও এটি মেটার স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থার চোখ এড়িয়ে গেছে।
বাণিজ্যিক পণ্যে রাজনৈতিক প্রতীক
বাণিজ্যিক পণ্যে রাজনৈতিক প্রতীক অনুসন্ধানে অন্তত ৪২টি এমন বিজ্ঞাপন শনাক্ত করা হয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক দলের লোগো সম্বলিত টি-শার্ট, ক্যাপ, হুডিসহ বিভিন্ন পণ্য বিপণন করা হয়েছে। মেটার নীতি অনুযায়ী, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এমন যেকোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন থাকবে বিশেষ ক্যাটাগরিতে।
তবে প্ল্যাটফর্মটি এই ৪২টি বিজ্ঞাপনের একটিকেও সেভাবে শ্রেণিবদ্ধ করেনি। ফলে এগুলোর অন্তর্নিহিত বার্তা রাজনৈতিক হওয়া সত্ত্বেও ব্যবহারকারীদের কাছে এগুলো কেবল সাধারণ ই-কমার্স বিজ্ঞাপন হিসেবে পৌঁছেছে।
অবশ্য মেটা যে সব সময় এই ধরনের কনটেন্ট শনাক্ত করতে, ফ্ল্যাগ দিতে ও ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তা নয়। অনুসন্ধান চলাকালীনই এই ধরনের একটি বিজ্ঞাপন সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ‘ক্যাপ্টেন চয়েস’ নামের একটি পেজ থেকে চালু করা ওই বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, “৩০% ছাড়, প্রতি পিস মাত্র ৬৫০ টাকা!! ২ পিস অর্ডারে ডেলিভারি চার্জ সম্পূর্ণ ফ্রি!!”
বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত বেশ কিছু ছবির হুডিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নাম, লোগো ও ধানের শীষ (বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক) মার্কায় ভোট চেয়ে স্লোগান দেওয়া ছিল। বিজ্ঞাপনের বিবরণে মেটা উল্লেখ করেছে যে, ‘রাজনৈতিক, নির্বাচনী এবং সামাজিক ইস্যু’–সংক্রান্ত নীতিমালা মেনে না চলায় তারা বিজ্ঞাপনটি সরিয়ে নিয়েছে।
তবে প্ল্যাটফর্মটি অন্য একটি পেজ থেকে দেওয়া একই ধরনের বিজ্ঞাপন শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে, যেখানে হুডির ছবিতে বিএনপির যুব সংগঠন যুবদলের নাম ও লোগো ছিল। এটি আবারও মেটার শনাক্তকরণ ব্যবস্থার ত্রুটির প্রমাণ।
ডিসমিসল্যাব মেটার শনাক্তকরণ এড়িয়ে রাজনৈতিক দলের বই বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিষয়গুলোও নথিবদ্ধ করেছে। একটি বিজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, “‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ এবং ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’-এর সিলেবাসভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ ৪০টি বইয়ের সহজবোধ্য ও বিস্তারিত উপস্থাপনা।” বিজ্ঞাপনটি সরাসরি একটি রাজনৈতিক দল ও তার ছাত্র সংগঠনের নাম উল্লেখ করায় এটি মেটার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে চিহ্নিত হওয়া এবং রাজনৈতিক ক্যাটাগরিতে থাকা উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি।
নীতি এবং বাস্তবতার মধ্যে ব্যবধান
মেটার নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী, সামাজিক বিষয়, নির্বাচন বা রাজনীতি-সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন চালাতে চাইলে যেকোনো বিজ্ঞাপনদাতাকে একটি যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কোনো বিজ্ঞাপন যদি কোনো রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নির্বাচন বা জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়ের পক্ষে বা বিপক্ষে যায়, তবে তাতে অবশ্যই একটি ডিসক্লেইমার থাকতে হবে। এই ডিসক্লেইমারে বিজ্ঞাপনটির অর্থায়ন কে করেছে, তার নাম ও ঠিকানা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন।
বিজ্ঞাপনে কোনো দলের লোগো বা স্লোগান ব্যবহার করা হলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ হওয়া উচিত। মেটার নীতি অনুযায়ী, “যেসব বিজ্ঞাপনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য কোনো পণ্য বিক্রি বা সেবা প্রদান, সেগুলোকে সামাজিক ইস্যু-সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন হিসেবে গণ্য নাও করা হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে অনুমোদন ও ডিসক্লেইমারের প্রয়োজন নেই। তবে এটি এমন পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, যেখানে কোনো রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন বা আইনসভার উল্লেখ রয়েছে।” তবে বাস্তবে এই নীতিগুলোর প্রয়োগ শিথিল বলে মনে হয়। বিশেষ করে, বাংলা ভাষার কনটেন্ট এবং স্থানীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বোঝার ক্ষেত্রে মেটার সিস্টেমের দুর্বলতা এই অনুসন্ধানে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের আগে ডিসমিসল্যাব মেটার রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন শনাক্তকরণ ব্যবস্থায় একই ধরনের অসামঞ্জস্য খুঁজে পেয়েছিল। সেই সময় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার এবং অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক মো. পিজুয়ার হোসেন সতর্ক করে বলেছিলেন–“জাতীয় নির্বাচনেও যদি এমন অসামঞ্জস্যপূর্ণ ফ্ল্যাগিং দেখা যায়, তবে তা নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং এর স্বচ্ছতার প্রতি জনস্বার্থ ও বিশ্বাস উভয়কেই ক্ষুণ্ণ করতে পারে।”
পিজুয়ার হোসেনের মতে, যেসব প্রার্থীর বিজ্ঞাপন ফ্ল্যাগ করা হয়, তারা কম ভিজিবিলিটি, বিলম্বিত অ্যাপ্রুভাল ও অতিরিক্ত কমপ্লায়েন্সের চাপের সম্মুখীন হতে পারেন। আর যাদের বিজ্ঞাপনে ফ্ল্যাগ তোলা হয় না, তারা এই ধরনের বিধিনিষেধ এড়িয়ে বাড়তি সুবিধা পেয়ে যান। এই ধরনের অসমতা ভোটারদের তথ্য পাওয়ার সুযোগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, প্রচারের পরিসরকে একপেশে করে তুলতে পারে। শেষ পর্যন্ত ভোটারদের পছন্দ বা গণতান্ত্রিক পছন্দের বাইরে গিয়ে নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।
তিনি বলেন, “ভোটাররা যদি মনে করেন যে মেটার মতো একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থী বা দলের প্রতি অন্যায্য আচরণ করা হচ্ছে, তবে তারা পক্ষপাতের অভিযোগ তুলতে পারে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম উভয়ের প্রতিই আস্থা কমাতে পারে। বাংলাদেশের রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল পরিবেশে এ ধরনের ধারণা মেরুকরণ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করতে পারে।”
রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন শনাক্তকরণে মেটার দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। এর আগে ডিজিটাল রাইটের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল যে, ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্ল্যাটফর্মটি অনেক অপ্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপনকে রাজনৈতিক হিসেবে শনাক্ত করেছিল। কিন্তু বিভিন্ন রাজনীতিবিদ ও দলের বিজ্ঞাপন শনাক্ত করতে তারা ব্যর্থ হয়েছিল।
আহমেদ ইয়াসির আবরার: গবেষণা কর্মকর্তা, ডিসমিসল্যাব

বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার এখন তুঙ্গে। এর বড় একটি অংশ দখল করে আছে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বিজ্ঞাপন। নির্বাচনী প্রচারের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া নিষিদ্ধ বা অবৈধ না হলেও মেটাসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে, যা মেনে চলা বাধ্যতামূলক।
মেটার নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী, রাজনীতি সংশ্লিষ্ট যেকোনো বিজ্ঞাপনে এর পৃষ্ঠপোষক বা অর্থায়নকারীর নাম ও পরিচয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে মেটার স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের মাধ্যমে সেই বিজ্ঞাপন শনাক্ত হওয়া এবং দ্রুত সরিয়ে ফেলার কথা। তবে ‘ডিসমিসল্যাব’-এর একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মেটা সবসময় এই ধরনের প্রচারণামূলক কনটেন্ট শনাক্ত করতে এবং ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এটি মেটার স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থার ত্রুটিকেই নির্দেশ করছে।
বাংলাদেশ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই ধরনের ডিজিটাল প্রচারণার স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় ভুল তথ্য রোধ ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে মেটার মতো বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে।
এই অনুসন্ধানের জন্য ডিসমিসল্যাব গত ৭ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেটার ‘অ্যাড লাইব্রেরি’ বিশ্লেষণ করেছে। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা নেতার নাম ব্যবহার করা অন্তত ৫০২টি প্রচারণামূলক কনটেন্ট পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অন্তত ৪১টি বিজ্ঞাপনকে মেটা তাদের নীতিমালা অনুযায়ী ‘রাজনৈতিক, নির্বাচনী বা সামাজিক ইস্যু’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া অন্তত ৩২টি বিজ্ঞাপনে কোনো প্রকার বাধ্যতামূলক ডিসক্লেইমার বা পরিচয় ছাড়াই সরাসরি রাজনৈতিক দল, তাদের কর্মসূচি অথবা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের প্রচার চালানো হয়েছে।
সরাসরি রাজনৈতিক বার্তার পাশাপাশি এই অনুসন্ধানে এমন অন্তত ৪২টি বিজ্ঞাপনের খোঁজ পাওয়া গেছে, যেখানে বিভিন্ন বাণিজ্যিক পণ্য যেমন—টি-শার্ট, ক্যাপ, হুডি এবং বই বিক্রির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের নাম বা লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। মেটার নীতিমালা অনুযায়ী, এই ধরনের বিজ্ঞাপনেও ‘ডিসক্লেইমার’বা পরিচয় প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক।
অনুসন্ধানে এমন কিছু ঘটনা নথিবদ্ধ করা হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে, ডিসক্লেইমার না থাকায় একটি বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলা হলেও হুবহু একই ধরনের অন্য বিজ্ঞাপনগুলো ঠিকই সচল রয়েছে। বিষয়টি মেটার স্বয়ংক্রিয় বিজ্ঞাপন শনাক্তকরণ ব্যবস্থার (Automated ad detection system) দুর্বলতা ও অসামঞ্জস্যতাকে পুনরায় সামনে এনেছে।
শনাক্তকরণ এড়িয়ে চলছে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন
অনেক ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনদাতারা রাজনৈতিক দলের নাম এবং তাদের নির্বাচনী প্রতীক ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন প্রচার করলেও মেটা তার নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী সেগুলোকে রাজনৈতিক হিসেবে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এই বিজ্ঞাপনগুলো সাধারণ কনটেন্ট হিসেবে প্রচারিত হয়েছে।
মেটার নিয়ম অনুযায়ী, প্রচারণার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সাধারণ বিজ্ঞাপনগুলো তাদের অ্যাড লাইব্রেরি থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যায়। কিন্তু রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনগুলো ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি বিজ্ঞাপনে ঢাকা-১৫ আসনে জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতাদের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিজয় নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল। বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল–“ঢাকা-১৫ আসনে এনসিপি-র প্রচারণা চলছে। জনতার প্রতীক, শাপলা কলি প্রতীক। গ্রাম থেকে শহরের অলিগলি, এবার জিতবে শাপলা কলি। ইনশাআল্লাহ, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি–এনসিপি।”বিজ্ঞাপনে সরাসরি একটি দল ও তার নির্বাচনী প্রতীকের উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও মেটা এটিকে রাজনৈতিক ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বিজ্ঞাপনটি এখন আর অ্যাড লাইব্রেরিতে দেখা যাচ্ছে না।
অন্য আরেকটি বিজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, দলটির প্রার্থী এবং দলের মধ্যে তার পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, “সংসদীয় প্রার্থী–১৪৭ ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর), আমির, গৌরীপুর উপজেলা, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।”পর্যালোচনায় দেখা যায়, মেটা এটিকে একটি সাধারণ বিজ্ঞাপন হিসেবে গণ্য করেছে এবং তাই এটি আর অ্যাড লাইব্রেরিতে নেই।
তৃতীয় একটি বিজ্ঞাপন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একজন সিনিয়র নেতার অফিসিয়াল পেজ থেকে পোস্ট করা হয়েছিল, যিনি পঞ্চগড়-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এতে বলা হয়েছে–“
হার্ভার্ড-অক্সফোর্ডের আন্তর্জাতিক জ্ঞান এবং পঞ্চগড়ের মাটি থেকে উঠে আসা অভিজ্ঞতা, কারণ বাংলাদেশের জন্য নীতি নির্ধারণে অবশ্যই মাটি থেকে উঠে আসা অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগাতে হবে।”
বিজ্ঞাপনের শেষ লাইনে সরাসরি ভোটারদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কীভাবে তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন–“সঠিক ও কার্যকর নীতি বাস্তবায়নে সঠিক নেতৃত্বকে ভোট দিন।।”
মেটার নীতিমালা অনুযায়ী, সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তার ক্ষেত্রে অর্থায়নকারীর তথ্য প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই বিজ্ঞাপনে তা করা হয়নি এবং তবুও এটি মেটার স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থার চোখ এড়িয়ে গেছে।
বাণিজ্যিক পণ্যে রাজনৈতিক প্রতীক
বাণিজ্যিক পণ্যে রাজনৈতিক প্রতীক অনুসন্ধানে অন্তত ৪২টি এমন বিজ্ঞাপন শনাক্ত করা হয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক দলের লোগো সম্বলিত টি-শার্ট, ক্যাপ, হুডিসহ বিভিন্ন পণ্য বিপণন করা হয়েছে। মেটার নীতি অনুযায়ী, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এমন যেকোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন থাকবে বিশেষ ক্যাটাগরিতে।
তবে প্ল্যাটফর্মটি এই ৪২টি বিজ্ঞাপনের একটিকেও সেভাবে শ্রেণিবদ্ধ করেনি। ফলে এগুলোর অন্তর্নিহিত বার্তা রাজনৈতিক হওয়া সত্ত্বেও ব্যবহারকারীদের কাছে এগুলো কেবল সাধারণ ই-কমার্স বিজ্ঞাপন হিসেবে পৌঁছেছে।
অবশ্য মেটা যে সব সময় এই ধরনের কনটেন্ট শনাক্ত করতে, ফ্ল্যাগ দিতে ও ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তা নয়। অনুসন্ধান চলাকালীনই এই ধরনের একটি বিজ্ঞাপন সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ‘ক্যাপ্টেন চয়েস’ নামের একটি পেজ থেকে চালু করা ওই বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, “৩০% ছাড়, প্রতি পিস মাত্র ৬৫০ টাকা!! ২ পিস অর্ডারে ডেলিভারি চার্জ সম্পূর্ণ ফ্রি!!”
বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত বেশ কিছু ছবির হুডিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নাম, লোগো ও ধানের শীষ (বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক) মার্কায় ভোট চেয়ে স্লোগান দেওয়া ছিল। বিজ্ঞাপনের বিবরণে মেটা উল্লেখ করেছে যে, ‘রাজনৈতিক, নির্বাচনী এবং সামাজিক ইস্যু’–সংক্রান্ত নীতিমালা মেনে না চলায় তারা বিজ্ঞাপনটি সরিয়ে নিয়েছে।
তবে প্ল্যাটফর্মটি অন্য একটি পেজ থেকে দেওয়া একই ধরনের বিজ্ঞাপন শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে, যেখানে হুডির ছবিতে বিএনপির যুব সংগঠন যুবদলের নাম ও লোগো ছিল। এটি আবারও মেটার শনাক্তকরণ ব্যবস্থার ত্রুটির প্রমাণ।
ডিসমিসল্যাব মেটার শনাক্তকরণ এড়িয়ে রাজনৈতিক দলের বই বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিষয়গুলোও নথিবদ্ধ করেছে। একটি বিজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, “‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ এবং ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’-এর সিলেবাসভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ ৪০টি বইয়ের সহজবোধ্য ও বিস্তারিত উপস্থাপনা।” বিজ্ঞাপনটি সরাসরি একটি রাজনৈতিক দল ও তার ছাত্র সংগঠনের নাম উল্লেখ করায় এটি মেটার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে চিহ্নিত হওয়া এবং রাজনৈতিক ক্যাটাগরিতে থাকা উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি।
নীতি এবং বাস্তবতার মধ্যে ব্যবধান
মেটার নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী, সামাজিক বিষয়, নির্বাচন বা রাজনীতি-সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন চালাতে চাইলে যেকোনো বিজ্ঞাপনদাতাকে একটি যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কোনো বিজ্ঞাপন যদি কোনো রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নির্বাচন বা জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়ের পক্ষে বা বিপক্ষে যায়, তবে তাতে অবশ্যই একটি ডিসক্লেইমার থাকতে হবে। এই ডিসক্লেইমারে বিজ্ঞাপনটির অর্থায়ন কে করেছে, তার নাম ও ঠিকানা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন।
বিজ্ঞাপনে কোনো দলের লোগো বা স্লোগান ব্যবহার করা হলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ হওয়া উচিত। মেটার নীতি অনুযায়ী, “যেসব বিজ্ঞাপনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য কোনো পণ্য বিক্রি বা সেবা প্রদান, সেগুলোকে সামাজিক ইস্যু-সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন হিসেবে গণ্য নাও করা হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে অনুমোদন ও ডিসক্লেইমারের প্রয়োজন নেই। তবে এটি এমন পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, যেখানে কোনো রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন বা আইনসভার উল্লেখ রয়েছে।” তবে বাস্তবে এই নীতিগুলোর প্রয়োগ শিথিল বলে মনে হয়। বিশেষ করে, বাংলা ভাষার কনটেন্ট এবং স্থানীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বোঝার ক্ষেত্রে মেটার সিস্টেমের দুর্বলতা এই অনুসন্ধানে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের আগে ডিসমিসল্যাব মেটার রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন শনাক্তকরণ ব্যবস্থায় একই ধরনের অসামঞ্জস্য খুঁজে পেয়েছিল। সেই সময় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার এবং অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক মো. পিজুয়ার হোসেন সতর্ক করে বলেছিলেন–“জাতীয় নির্বাচনেও যদি এমন অসামঞ্জস্যপূর্ণ ফ্ল্যাগিং দেখা যায়, তবে তা নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং এর স্বচ্ছতার প্রতি জনস্বার্থ ও বিশ্বাস উভয়কেই ক্ষুণ্ণ করতে পারে।”
পিজুয়ার হোসেনের মতে, যেসব প্রার্থীর বিজ্ঞাপন ফ্ল্যাগ করা হয়, তারা কম ভিজিবিলিটি, বিলম্বিত অ্যাপ্রুভাল ও অতিরিক্ত কমপ্লায়েন্সের চাপের সম্মুখীন হতে পারেন। আর যাদের বিজ্ঞাপনে ফ্ল্যাগ তোলা হয় না, তারা এই ধরনের বিধিনিষেধ এড়িয়ে বাড়তি সুবিধা পেয়ে যান। এই ধরনের অসমতা ভোটারদের তথ্য পাওয়ার সুযোগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, প্রচারের পরিসরকে একপেশে করে তুলতে পারে। শেষ পর্যন্ত ভোটারদের পছন্দ বা গণতান্ত্রিক পছন্দের বাইরে গিয়ে নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।
তিনি বলেন, “ভোটাররা যদি মনে করেন যে মেটার মতো একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থী বা দলের প্রতি অন্যায্য আচরণ করা হচ্ছে, তবে তারা পক্ষপাতের অভিযোগ তুলতে পারে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম উভয়ের প্রতিই আস্থা কমাতে পারে। বাংলাদেশের রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল পরিবেশে এ ধরনের ধারণা মেরুকরণ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করতে পারে।”
রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন শনাক্তকরণে মেটার দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। এর আগে ডিজিটাল রাইটের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল যে, ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্ল্যাটফর্মটি অনেক অপ্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপনকে রাজনৈতিক হিসেবে শনাক্ত করেছিল। কিন্তু বিভিন্ন রাজনীতিবিদ ও দলের বিজ্ঞাপন শনাক্ত করতে তারা ব্যর্থ হয়েছিল।
আহমেদ ইয়াসির আবরার: গবেষণা কর্মকর্তা, ডিসমিসল্যাব

গত দুই দিনে ইরানের রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে উঠেছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইরানি রিয়ালের মান নেমে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতি ৪২ শতাংশের ওপরে ওঠায়, সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির নেতৃত্বাধীন ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের মুখে পড়েছে।