আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বৈশ্বিক নিরাপত্তা রোডম্যাপ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এতে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ কর্মসূচিকে লক্ষ্য হিসেবে আর উল্লেখ করা হয়নি। ২০২৬ সালে পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক অগ্রগতির জন্য ওয়াশিংটন কৌশলগতভাবে এমনটি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করে ২০০৩ সালে। এরপর থেকে প্রতিটি মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকি শেষ করার লক্ষ্যটি স্থায়ীভাবে ছিল।
কিন্তু শুক্রবার প্রকাশিত নথিতে দেখা যায়, এটি স্পষ্টভাবে অনুপস্থিত।
উত্তর কোরিয়ার দ্রুত অগ্রসরমান পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির কোনো উল্লেখ না থাকা- ট্রাম্প ও কিম জং উনের মধ্যে সম্ভাব্য আলোচনার প্রত্যাশা বাড়াচ্ছে। শেষবার দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হয়েছিল ২০১৯ সালে।
ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, তিনি কিমের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, কিছু পদক্ষেপ নিয়ে কিছু একটা করতে চান। এমনটাই জানিয়েছেন কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল ইউনিফিকেশনের গবেষক হং মিন। তিনি বলেন, “আমি মনে করি সচেতন উদ্দেশ্যের একটা মাত্রা আছে। নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি যে এখানে আনতেই হবে, তার কোনো আবশ্যকতা নেই।’’
২০১৭ সালে প্রকাশিত ট্রাম্পের আগের নিরাপত্তার রোডম্যাপে উত্তর কোরিয়ার কথা ১৬ বার উল্লেখ করা হয়েছিল, আমেরিকার প্রতি হুমকি হিসেবে। সেখানে বলা হয়, উত্তর কোরিয়া যেকোনো সময় আমেরিকার বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
এ বছরের নথিতে ট্রাম্পের নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে, যা মূলত তাইওয়ান নিয়ে চীনের সঙ্গে সংঘাতকে কেন্দ্র করে। এশিয়ায় মার্কন মিত্র, বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কিমের দৃষ্টিভঙ্গি
সোমবার দক্ষিণ কোরিয়া ও আমেরিকা–দুই দেশই উত্তর কোরিয়াকে ঘিরে তাদের নীতিতে পরিবর্তনের কথা অস্বীকার করেছে। তারা জোর দিয়ে বলছে, নিরস্ত্রীকরণই এখনো তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। কিম স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তিনি আলোচনায় ফিরবেন কি না–তা নির্ভর করে সেই আলোচনার ধরন কেমন হবে তার ওপর।
‘নিরস্ত্রীকরণ’ কথাটির গুরুত্ব আর আগের মতো নেই। সেপ্টেম্বর মাসে পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে কিম বলেন, “আমরা এখন একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র। এখন ‘নিরস্ত্রীকরণ’ আমাদের কাছ থেকে আশা করা সর্বশেষ বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি অন্য দেশের নিরস্ত্রীকরণের আজগুবি অনুসন্ধান থেকে নিজেকে মুক্ত করে বাস্তবতা স্বীকার করে নেয় এবং আমাদের সঙ্গে সত্যিকারের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চায়, তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে আলোচনায় বসতে কোনো আপত্তি নেই।’’
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সঙ্গে শান্তিচুক্তি আলোচনায় অংশ নিলে কিমের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থান আরও মজবুত হবে এবং তিনি তাঁর দেশের জনগণের কাছে প্রমাণ করতে পারবেন যে তিনি এমন একটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন, যা তার পিতা ও পিতামহ পূরণ করতে পারেননি।
এই দুই নেতা ২০১৮ ও ২০১৯ সালে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। তবে তা সফল হয়নি পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডার নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে। উত্তর কোরিয়া অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জন্য কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান কী?
মার্কিন নথি প্রকাশের পর থেকে দক্ষিণ কোরিয়া বলছে, আগামী বছর উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যা আমেরিকা তো বটেই চীন ও জাপানসহ প্রধান শক্তিগুলোর ইতিবাচক সংকেত।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়া গোপনে তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। দেশটি ২০৩৫ সালের মধ্যে জিডিপির ৩.৫% সামরিক ব্যয়ে খরচ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ শনিবার দক্ষিণ কোরিয়াকে প্রশংসা করে বলেন, “দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের মিত্র দেশ, সে জন্য তারা আমাদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পাবে।” তিনি আশাবাদী ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য মিত্র দেশও একই পথে হাঁটবে।
অক্টোবরে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং আমেরিকার সহায়তায় জ্বালানি সরবরাহের মাধ্যমে পারমাণবিক চালিত সাবমেরিন নির্মাণের অনুমোদন পান। কারণ সিউল পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত থাকার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে।
প্রথম মেয়াদে উত্তর কোরিয়া নিয়ে ট্রাম্পের মাথাব্যথা ছিল। এবার এখন পর্যন্ত এর কোনো আভাসই মিলছে না। তার মানে কি, ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে তোয়াজ করে চলছেন? এমন নাও হতে পারে। কেননা প্রথম মেয়াদের চেয়ে এবার ট্রাম্পকে অন্যরকম মনে হচ্ছে। তবে তিনি আসলে কী চাইছেন, সেটি সময়ই বলে দেবে।