হামাস কী

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
হামাস কী
অস্ত্র হাতে এক হামাস যোদ্ধা। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

হামাস ফিলিস্তিনের একটি স্বাধীনতাকামী সংগঠন এবং রাজনৈতিক দল। তারা ২০ লাখ ফিলিস্তিনির আবাসস্থল গাজা উপত্যকা শাসন করে।

হামাস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৭ সালে প্রথম ফিলিস্তিনি বিদ্রোহ (ইন্তিফাদা) চলাকালে। তাদের প্রাথমিক ঘোষণাপত্রে (চার্টার) ইসরায়েলের ধ্বংস এবং ইহুদিদের হত্যার ডাক দেওয়া হয়েছিল।

হামাস ইসরায়েলকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে না। তাদের মূল লক্ষ্য হলো ভূমধ্যসাগর থেকে জর্ডান নদী পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

কট্টর ইসরায়েলবিরোধী আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমাদ ইয়াসিন ও আবদেল আজিজ আল-রান্তিসির হাতে গাজায় হামাস প্রতিষ্ঠা পায়। ২০০৪ সালের মার্চে গাজায় ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন আহমাদ ইয়াসিন। পরের মাসেই নিহত হন আজিজ আল-রান্তিসি।

হামাস প্রাথমিকভাবে দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়। প্রথমত, এর সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাশেম ব্রিগেডসের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। দ্বিতীয়ত, ফিলিস্তিনে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করা। বিশেষত ইসরায়েলি দখলদারত্বের কারণে ভুক্তভোগী ফিলিস্তিনিদের কল্যাণে কাজ করা।

গত কয়েক দশকে হামাস আত্মঘাতী বোমা হামলা, রকেট হামলা এবং অপহরণসহ বহু সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত । এ কারণে অনেক দেশ হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ডের কারণে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, মিশর ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে হামাস ও এর সামরিক শাখা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে পরিচিত।

হামাসের বেশ কিছু আঞ্চলিক সমর্থক রয়েছে। তারা হলো ইরান, সিরিয়া ও লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এরা সবাই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী হিসেবে পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্য ও ইসরায়েল নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের নীতির বিরোধিতা করে হামাস ও তার মিত্ররা।

২০০৬ সালে হামাস ফিলিস্তিনি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পরের বছর প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহ দলের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত গৃহযুদ্ধের পর তারা গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়, যেখানে এরপর আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

ফাতাহ হল সেই দল যা পিএ নিয়ন্ত্রণ করে, যা ১৯৯৪ সালে পশ্চিম তীর এবং গাজার সরকার হিসেবে গঠিত হয়েছিল। তবে, ২০০৭ সালে হামাস ক্ষমতা দখল করার পর, তারা ফাতাহ এবং পিএকে সহিংসভাবে গাজা থেকে বিতাড়িত করে।

ফিলিস্তিনি রাজনীতিতে হামাস এবং ফাতাহ প্রধান দল। ফাতাহ পশ্চিম তীরে এবং হামাস গাজা উপত্যকায় শাসন করে। উভয়ই ফিলিস্তিনি জনগণের নেতৃত্ব দিতে চায়। বছরের পর বছর ধরে, তারা তাদের মতপার্থক্য মিটিয়ে নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছে।

সেই থেকে ইসরায়েল ও মিশর গাজার ওপর অবরোধ আরোপ করেছে। এটি গাজার অর্থনীতি ও মানুষের চলাফেরাকে মারাত্মকভাবে সীমিত করেছে। তবুও হামাস চোরাচালান এবং ইরানের মতো মিত্রদের সমর্থনের মাধ্যমে তাদের সামরিক শক্তি ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে।

হামাস একইসঙ্গে গাজার শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন হিসেবে কাজ করে। এই দ্বৈত পরিচয় তাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলেছে, কারণ তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সামরিক কর্মকাণ্ডকে আলাদা করা কঠিন।

২০০৮ সাল থেকে হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাঁচটি যুদ্ধ শুরু করেছে। এর মধ্যে সর্বশেষটি ছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আক্রমণ, যা ছিল অত্যন্ত জটিল ও পরিকল্পিত। ওইদিন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ভেদ করা হয়, শত শত বেসামরিক লোক নিহত হয় এবং অনেককে অপহরণ করা হয়। এই আক্রমণ হামাসের ক্রমবর্ধমান সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন করেছিল। বিশ্বের অন্যতম আধুনিক সামরিক শক্তি ইসরায়েলের জন্য এটি এক গুরুতর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

তথ্যসূত্র: ইকোনমিস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা

সম্পর্কিত