আমাদের শরীর ঠিকঠাক কাজ করবে কিনা, তার অনেকটাই নির্ভর করে হরমোনের ওপর। কিন্তু হরমোনের কাজ বা প্রভাব আসলে আরও অনেক বেশি। এমনকি হরমোন যে সবসময় ইতিবাচক প্রভাবই ফেলে—এমন নয়। এর বেশ মারাত্মক প্রভাবও পড়তে পারে আমাদের শরীর ও মনের ওপর।
আমরা সবাই ভাবতে ভালোবাসি যে, আমাদের আবেগ-অনুভূতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আসলেই কি তা? বিজ্ঞানীরা দীর্ঘকাল ধরেই জানেন যে, নিউরোট্রান্সমিটার নামক রাসায়নিক বার্তাবাহকরা আমাদের মস্তিষ্কের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে। তা সত্ত্বেও, সময় যত এগোচ্ছে, বিজ্ঞানীরা দেখছেন যে, মস্তিষ্কের ওপর হরমোনগুলোর অভাবিত প্রভাব রয়েছে। বর্তমানে এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিষণ্ণতা, উদ্বেগ ও মানসিক অস্থিরতার মতো রোগের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
হরমোন হলো নির্দিষ্ট গ্রন্থি, অঙ্গ এবং কলা (টিস্যু) দ্বারা নিঃসৃত রাসায়নিক বার্তাবাহক। এগুলো রক্তে প্রবেশ করে এবং সারা শরীরে ঘুরে বেড়ায়। অবশেষে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রিসেপ্টরগুলোর সাথে যুক্ত হয়। এই সংযুক্তি এক ধরনের জৈবিক handshake এর মতো কাজ করে, যা শরীরকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, ইনসুলিন হরমোনটি লিভার ও পেশি কোষগুলোকে রক্ত থেকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ শোষণ করে গ্লাইকোজেন হিসেবে সঞ্চয়ের নির্দেশ দেয়।
শরীর ও মনের ওপর হরমোনের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ
বিজ্ঞানীরা মানবদেহে এ পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি হরমোন শনাক্ত করেছেন। এগুলো একত্রে মানুষের বৃদ্ধি ও বিকাশ, যৌনতা, প্রজনন, ঘুম-জাগরণ চক্র এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ–তাদের মানসিক সুস্থতাসহ শত শত শারীরিক ও মানসিক প্রক্রিয়া পরিচালনা করে।
এ প্রসঙ্গে কানাডার অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক নাফিসা ইসমাইল বলেন, "হরমোনগুলো মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট জায়গায় উৎপন্ন হওয়া নিউরোট্রান্সমিটারগুলোর সাথে মিথস্ক্রিয়া করার মাধ্যমে আমাদের মেজাজ এবং আবেগকে প্রভাবিত করে। আবার, পাশাপাশি কোষের মৃত্যু অথবা নিউরোজেনেসিসের (যখন নতুন নিউরন তৈরি হয় বা জন্ম নেয়) মতো প্রক্রিয়াগুলোতে প্রভাব ফেলার মাধ্যমেও হরমোনগুলো আমাদের বিভিন্ন অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে।”
হরমোনজনিত পরিবর্তনের সময় বিষণ্ণতা অস্থিরতা এবং পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের (PTSD) মতো মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধির প্রকোপ বেশি দেখা যায়। আর নারীরা পুরুষদের তুলনায় এসব মানসিক ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত হয়। শৈশবে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে বিষণ্ণতার হার প্রায় সমান থাকলেও বয়ঃসন্ধিকালের শুরুতেই মেয়েদের বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ছেলেদের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। তখন থেকে জীবনের পুরোটা সময় নারীরা পুরুষদের চেয়ে এই সমস্যায় বেশি ভুগতে থাকে। তাহলে এই ভোগান্তির দায় কি হরমোনগুলোরই?
পাঠক যদি নারী হন, তবে আপনার বিশ্বাস নাও হতে পারে যে, সেক্স হরমোন মেজাজের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। একজন নারীর মাসিকের আগের দিনগুলোতে এবং সপ্তাহগুলোতে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন-এর মাত্রা কমে যায়। এতে সবার না হলেও অনেকের মধ্যেই খিটখিটে মেজাজ, ক্লান্তি, দুঃখবোধ কিংবা অস্থিরতা দেখা দেয়। কিছু নারী, এমনকি প্রি-মেন্সট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডারের (পিএমডিডি) মতো অবস্থার মধ্য দিয়েও যায়। প্রি-মেন্সট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার এক ধরনের হরমোনজনিত ব্যাধি। এতে আক্রান্ত হলে মাসিকের আগের দুই সপ্তাহজুড়ে চরম মেজাজ পরিবর্তন, অস্থিরতা, বিষণ্ণতা—এমনকি কারও কারও মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতাও দেখা যায়।
আমেরিকার জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের মনোরোগবিদ্যা ও আচরণ বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক লিসা হান্টসু বলেন, প্রি-মেন্সট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত নারীদের জন্য এটি একটি খুবই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যা তাদের প্রতি মাসে মোকাবিলা করতে হয়। আর এর প্রভাবও মারাত্মক হয়।"
অন্যদিকে ওভালুয়েশনের ঠিক আগে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায়। তারা শারীরিক–মানসিক দুভাবেই খুব সুস্থ আর চনমনে থাকে। একইসঙ্গে প্রোজেস্টেরন ভেঙে তৈরি হওয়া অ্যালোপ্রেগনানোলোন কারণে একরকম স্থিরতাও আসে।
হান্টসু বলেন, "কাউকে অ্যালোপ্রেগনানোলোন ইনজেকশন দেওয়া হলে তার অস্থিরতা এবং উদ্বেগ কমে যাবে।”
তবে এমন না যে, নারীরা শুধু মাসিকের সময়টাতেই এমন অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যায়। গর্ভাবস্থা, পেরিমেনোপজ ও মেনোপজের সময় হরমোনের তারতম্যও মানসিক স্বাস্থ্যে বিপর্যয় ঘটাতে পারে। যারা সদ্য সন্তান প্রসব করেছেন, তাদের মধ্যে ১৩ শতাংশ বিষণ্ণতায় ভোগেন।
সন্তান জন্মের পর, নারীদের প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা হঠাৎ করেই অনেক কমে যায়। একইভাবে মেনোপজের আগের সময়, যাকে পেরিমেনোপজ বলা হয়, তখনও নারীদের দেহে এই হরমোনগুলোর মাত্রায় বড় রকমের পরিবর্তন ঘটে।
কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর মনোরোগবিদ্যার অধ্যাপক লিসা গালিয়া বলেন, "সমস্যাটা আসলে কারও হরমোনের নির্দিষ্ট মাত্রার জন্য হয় না। হরমোনের ওঠানামার সময়টাতেই বেশি হয়। তবে সবার ক্ষেত্রে এর প্রভাব এক রকম না। কেউ কেউ হরমোনের এই ওঠানামার সময় খুবই সংবেদনশীল হয়ে পড়েন। আবার কেউ মেনোপজ পুরোটা পার করে যান কোনো উপসর্গ ছাড়াই।"
এটা শুধু নারীদের ক্ষেত্রেই নয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের শরীরেও টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। তবে তাদের এই পরিবর্তনটি ধীরে ধীরে ঘটে এবং নারীদের তুলনায় ততটা স্পষ্ট নয়। এই ছোট পরিবর্তনটিও কিছু পুরুষের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইসমাইল বলেন, "আমরা দেখি যে, পুরুষদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা জীবনের বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পুরুষের মনের অবস্থায়ও পরিবর্তন আসে। তবে নারীদের হরমোনাল পরিবর্তনের তুলনায় পুরুষদের এই বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না এখনো।”
মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা বাড়িয়ে যৌন হরমোনগুলো মানুষের মনোভাবকে প্রভাবিত করতে পারে। দীর্ঘদিন ধরেই সেরোটোনিনের স্বল্প মাত্রাকে বিষণ্নতার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আরেকটি তত্ত্ব হলো—ইস্ট্রোজেন স্নায়ুকোষকে (নিউরন) ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং এমনকি নতুন স্নায়ুকোষ তৈরিতেও সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস নামের একটি অঞ্চল স্মৃতি ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। যাদের বিষণ্নতা বা অ্যালঝেইমার রোগ রয়েছে, তাদের হিপোক্যাম্পাসে নিউরনের ঘাটতি দেখা যায়। অন্যদিকে, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ও মন ভালো করার জন্য ব্যবহৃত সাইকেডেলিক ড্রাগ (যেমন সাইকোসিলিবিন যা ম্যাজিক মাশরুমে পাওয়া যায়) হিপোক্যাম্পাসে নতুন নিউরনের জন্ম দেয়।
ইসমাইল বলেন, "ইস্ট্রোজেন স্নায়ুকোষের জন্য সুরক্ষামূলক (নিউরো-প্রোটেকটিভ), তাই এটি নতুন স্নায়ুকোষ তৈরিতে (নিউরোজেনেসিস) সহায়তা করে। এ কারণে যখন নারীরা মেনোপজে প্রবেশ করেন, তখন আমরা দেখি স্নায়ুকোষের শাখা (ডেনড্রাইট) সংকুচিত হতে থাকে।" ফলে মেনোপজের সময় অনেক নারী ব্রেইন ফগ (মস্তিষ্কে ঝাপসা ভাব) ও স্মৃতিভ্রান্তির সমস্যার মুখোমুখি হন।
যখন শরীরের স্ট্রেস প্রতিক্রিয়া বিঘ্নিত হয়
মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস নামের অংশে যদি স্নায়ুকোষ (নিউরন) কমে যায়, তাহলে শরীরের স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন সিস্টেম (এইচপিএ অ্যাক্সিস) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
যখন আমরা দুশ্চিন্তায় ভুগি, তখন হাইপোথ্যালামাস নামের মস্তিষ্কের একটি অংশ পিটুইটারি গ্রন্থিকে সংকেত দেয়, যেন এটা এসিটিএইচ নামের হরমোন ছাড়ে। এরপর এই হরমোন অ্যাডরিনাল গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করতে।
কর্টিসল শরীরকে রক্তে চিনি (গ্লুকোজ) ছাড়ার নির্দেশ দেয়, যাতে মস্তিষ্ক ও শরীর জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত কাজ করতে পারে।
হ্যান্টসু বলেন, "যখন কেউ স্ট্রেসে থাকে, তখন শরীরের এইচপিএ অ্যাক্সিস সক্রিয় হয়ে ওঠে। স্বল্পমেয়াদে এটি উপকারী। কারণ, এটি শরীরকে স্ট্রেস মোকাবিলায় সাহায্য করে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি ক্ষতিকর হতে পারে।"
সাধারণত, শরীরে কর্টিসল বেড়ে গেলে একটি প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। তখন হিপোক্যাম্পাস, যা মস্তিষ্কের স্মৃতি ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে যুক্ত, হাইপোথ্যালামাসকে জানায় যেন পিটুইটারি গ্রন্থির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং স্ট্রেস প্রতিক্রিয়া থেমে যায়।
কিন্তু যদি কেউ দীর্ঘদিন ধরে স্ট্রেসে থাকে, যেমন ভয়, নির্যাতন বা সহিংসতার মতো পরিস্থিতিতে, তাহলে আর এটা কাজ করে না। ফলে মস্তিষ্ক কর্টিসলে ভরে যায়। এটি ক্ষতিকর কারণ, কর্টিসল সময়ের সাথে সাথে মস্তিষ্কে প্রদাহ বাড়ায়, যা হিপোক্যাম্পাসের নিউরন নষ্ট করে। ফলে সেটি আর স্ট্রেস বন্ধ করার সংকেত দিতে পারে না।
শুধু হিপোক্যাম্পাস নয়, কর্টিসল মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশ যেমন অ্যামিগডালা ও প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সেও নিউরনের ক্ষতি করতে পারে। এর প্রভাব পড়ে স্মৃতি, মনোযোগ ও মনের অবস্থার ওপর।
গবেষণায় দেখা গেছে, অক্সিটোসিন নাকের মাধ্যমে নিলে (স্প্রে আকারে) মানুষ আরও উদার, সহযোগিতাপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে, এমনকি অপরিচিতদের ওপরও বেশি আস্থা রাখতে শুরু করে।
তবে, সবাই এ বিষয়ে একমত নন। উদাহরণস্বরূপ, এখনো নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়নি যে, অক্সিটোসিন ব্লাড–ব্রেইন ব্যারিয়ার অতিক্রম করতে পারে।
তারচেয়ে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য একটি মত হলো, গলার কাছে প্রজাপতির মতো দেখতে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নির্গত দুটি প্রধান হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বিষণ্নতা (ডিপ্রেশন) ও উদ্বেগ (অ্যাংজাইটি) তৈরি করতে পারে।
এই দুটি হরমোন হলো ট্রাইআয়োডোথাইরোনিন (টি–থ্রি) ও থাইরক্সিন (টি–ফোর)। এরা একসাথে হৃদস্পন্দন ও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। তবে যখন এই হরমোনের মাত্রা খুব বেশি হয়, যেমন অতিরিক্ত সক্রিয় থাইরয়েড হলে উদ্বেগ দেখা দিতে পারে। আর বিপরীতে, হরমোনের মাত্রা যদি খুব কমে যায়, তখন বিষণ্নতা দেখা দেয়।
ভালো খবর হলো, এই হরমোনের ভারসাম্য ঠিক করে দিলে বেশির ভাগ রোগীর লক্ষণ সেরে যায়।
ইসমাইল বলেন, "যখন কোনো রোগী চিকিৎসকের কাছে যান এবং মুড বা মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের কথা বলেন, তখন চিকিৎসকেরা প্রথম যে কাজগুলো করেন, তা হলো হরমোনাল প্রোফাইল পরীক্ষা। কারণ, অনেক সময় আমরা যদি হরমোনের পরিবর্তন শনাক্ত করে তা ঠিক করতে পারি, তাহলে মুডও ঠিক হয়ে যায়।"
আবার, থাইরয়েড হরমোন কীভাবে মনের ওপর প্রভাব ফেলে, তা এখনো পুরোপুরি বোঝা যায়নি। তবে একটি তত্ত্ব অনুযায়ী, বিশেষ করে টি–থ্রি হরমোন মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মাত্রা বাড়াতে পারে, অথবা এই নিউরোট্রান্সমিটারের রিসেপ্টরগুলোকে আরও সংবেদনশীল করে তুলতে পারে।
এ ছাড়া থাইরয়েড হরমোনের রিসেপ্টর মস্তিষ্কের যেসব অংশ মুড বা মানসিক অবস্থার নিয়ন্ত্রণে জড়িত, সেসব এলাকায় অনেক বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।
নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি
আশা করা হচ্ছে, হরমোন এবং মনের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কিত নতুন জ্ঞান ভবিষ্যতে নতুন ধরনের চিকিৎসায় পরিণত হবে। এরই মধ্যে এর শুরুর ধাপটি দেখা যাচ্ছে। যেমন, ব্রেক্সানোলোন নামের একটি ওষুধ, যা অ্যালোপ্রেগনানোলোন নামের হরমোনের মতো কাজ করে। এটা সন্তান জন্মের পর মায়ের মধ্যে সৃষ্ট বিষণ্নতা (পোস্ট–পার্টাম ডিপ্রেশন) নিরাময়ে খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, যদি শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম থাকে, তাহলে কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের সঙ্গে টেস্টোস্টেরন সাপ্লিমেন্ট সংশ্লিষ্ট ওষুধগুলোকে আরও কার্যকর করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ইস্ট্রোজেন থেরাপি, যার মধ্যে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরটি) অন্তর্ভুক্ত, পেরিমেনোপজ ও মেনোপজের সময় কিছু নারীর মানসিক প্রশান্তি দেয়।
অন্যদিকে, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (যেমন পিল) কিছু নারীর জন্য প্রিমেনস্ট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিজঅর্ডার (পিএমডিডি) উপসর্গে আশ্চর্যজনক ফল দেয়। তবে অন্যদের ক্ষেত্রে এটি উপসর্গ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই যে একেক জিনিস একেকজনের ওপর একেক রকম প্রভাব ফেলে, এটাই মূলত নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিকে বাধাগ্রস্ত করে।
এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইসমাইল বলেন, "আমরা জানি হরমোন মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা আবিষ্কারের আগে আমাদের বুঝতে হবে, তারা কীভাবে এই প্রভাব ফেলে। যেমন আমরা জানি, বর্তমানে যে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধগুলো সেরোটোনিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলো সব ক্ষেত্রেই তা কার্যকর নয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ করে কিশোরদের মধ্যে এগুলো কম কার্যকরী হতে পারে। তাই আমাদের জানতে হবে ওই বয়সের মানুষের মস্তিষ্ক ও তার বিকাশের কোনো বৈশিষ্ট্য তাদের এই চিকিৎসায় প্রতিরোধী করে তোলে কি না।"