নাগরিক অধিকার-নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে: আসক

চরচা প্রতিবেদক
চরচা প্রতিবেদক
নাগরিক অধিকার-নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে: আসক
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। ছবি: আসক ফেসবুক পেজ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। আজ শুক্রবার এক সংবাদ বিবৃতিতে এই উদ্বেগ জানিয়েছে আসক।

বিবৃতিতে বলা হয়, “ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির চিকিৎসাধীন অবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি আজ সর্বমহলের। নির্মম হামলায় তরুন রাজনীতিবিদ শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর সংবাদকে কেন্দ্র করে গতকাল ১৮ ডিসেম্বর রাত থেকে দেশে যে পরিকল্পিত মব সন্ত্রাস ও সহিংসতার ধারাবাহিকতা দেখা গেছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক ও ভয়াবহ। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাসমূহের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “১৮ ডিসেম্বর প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে সংঘটিত পরিকল্পিত হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং এর ফলে সেখানে কর্মরত সাংবাদিক, প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও ডে-কেয়ারে থাকা শিশুদের চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়ার ঘটনা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। হামলার সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও কর্মীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ পরিস্থিতির ভয়াবহতাকে আরও প্রকট করে তোলে। এসব ঘটনার কারণে পত্রিকা দুটির মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশ সম্ভব হয়নি এবং অনলাইন সংস্করণও বন্ধ রাখতে হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে, যা মতপ্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি ও গুরুতর আঘাত।”

আসক বলছে, “এই সহিংসতার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীরের ওপর মব তৈরি করে হেনস্তা করার ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ভয়ংকর বার্তা বহন করে। একই সঙ্গে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ভবনে হামলা, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়ির ধ্বংসাবশেষে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, রাজশাহী ও খুলনায় ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভের নামে জমায়েত এবং চট্টগ্রামে ভারতীয় উপ-হাইকমিশনের সামনে রাতের বেলা অবস্থান, সব মিলিয়ে একটি সুপরিকল্পিত অস্থিরতা সৃষ্টির চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একই ধারাবাহিকতায় একজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে গনমাধ্যমে সংবাদ বেরিয়েছে।”

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, সংবাদমাধ্যম, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, ঐতিহাসিক স্থাপনার ওপর এই ধরনের সমন্বিত হামলা দেশে উগ্র ও সহিংস চিন্তার বিপজ্জনক বিস্তারের ইঙ্গিত দেয়। ছায়ানট দীর্ঘদিন ধরে শিল্প-সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তার কেন্দ্র হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত; সেই প্রতিষ্ঠানে হামলা প্রমাণ করে যে অসহিষ্ণুতা ও উগ্রতার একটি অপ্রত্যাশিত ক্ষেত্র ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী কেন সময়মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি, তা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) অবিলম্বে হাদির মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তসহ মব সন্ত্রাসে জড়িতদের আইনের আওতায়, সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ নিরাপত্তা এবং জুলাই আন্দোলনের তরুণদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানায়।

সম্পর্কিত