শেষবার প্রধানমন্ত্রীর আসন থেকে নামার পর থেকে আইনি লড়াই থেকে শুরু করে নানা ঝঞ্ঝার মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার ঠাঁই হয় কারাগারে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের পর তাঁকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে তখন তিনিই হন একমাত্র বন্দী।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উঁচু দেয়াল, বিশাল ফটক এবং তার আশপাশে কারাবন্দীদের শ্রমে তৈরি নানা পণ্যের দোকান ইত্যাদি তখন ছিল না। ২০১৬ সালের ২৯ জুলাই পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের সব বন্দীকে কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে নেওয়া হয়। ফলে কারাফটকে বন্দীদের স্বজনদের সেই ভিড় এবং কারারক্ষীদের সেই হাঁকডাক তখন একেবারেই ছিল না। এই পরিত্যাক্ত কারাগারের প্রশাসনিক ভবনেই খালেদা জিয়াকে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
ঢাকার এই পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের সব বন্দীকে সরিয়ে নেওয়ার পর থেকেই ৭ হাজার বন্দী ধারণক্ষমতার কারাগারটি ফাঁকা ছিল। সরকার ১৭ একরের এই জায়গায় জাদুঘর, বিনোদনকেন্দ্র ও উন্মুক্ত স্থান করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ২০১৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের পর খালেদা জিয়াকে সেখানে অন্তরীণ রাখার সিদ্ধান্ত নিলে তা আবার সচল হয়। তিনিই হন এত বড় কারা-স্থাপনায় একমাত্র বন্দী। রায়ের আগে থেকেই প্রশাসনিক ভবনটি ধোয়ামোছা করে প্রস্তুত করা হয়।
শুরুতে অবশ্য খালেদা জিয়াকে কাশিমপুরে কেন্দ্রীয় নারী কারাগারে (কাশিমপুর-৩) রাখার কথা ভাবা হয়েছিল। তবে কাশিমপুর থেকে ঢাকার আদালতে আনা-নেওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় পরে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারেই তাকে অন্তরীণ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তার থাকার ব্যবস্থা করা হয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়কের জন্য নির্ধারিত কক্ষে। বাথরুমসহ বড় কক্ষে তাঁর থাকার জন্য খাটসহ নানা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আগে থেকেই নিয়ে রাখা হয়। পরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একজন পরিচারিকাকে তাঁর সঙ্গে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কুয়েত থেকে এতিমদের জন্য পাঠানো ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি করে দুদক। ওই বছরই ৪ জুলাই মামলাটি গ্রহণ করেন আদালত। তদন্ত শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন।
অন্য আসামিরা হলেন, মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক মুখ্যসচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।