নির্বাচনে কখনও হারেননি খালেদা

চরচা প্রতিবেদক
চরচা প্রতিবেদক
নির্বাচনে কখনও হারেননি খালেদা

নির্বাচন আর খালেদা জিয়ার জয়, একে অন্যের পরিপূরক। ১৯৮২ সালে রাজনীতিতে আসেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উত্তরাধিকারী হিসেবে। প্রথম নির্বাচন তারও ৯ বছর পরে, ১৯৯১ সালে। তিনিই বাংলাদেশের অন্যতম রাজনীতিক যিনি কখনোই কোনো নির্বাচনে হারেননি। পুরো বাংলাদেশ জুড়েই নির্বাচনী বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে গেছেন বিএনপির প্রয়াত চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের শীর্ষ রাজনীতিকদের প্রায় সবারই নিজস্ব সংসদীয় আসন আছে। যে আসনে সেই রাজনীতিকের জয় অনেকটাই অবধারিত থাকে। খালেদা জিয়ারও আছে। তবে অন্যদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার পার্থক্য হলো, তিনি নিজের নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য জায়গা থেকে নির্বাচন করে জিতেছেন। কখনো ঢাকা, কখনো চট্টগ্রাম, কখনো ফেনী, কখনো লক্ষ্মীপুর কিংবা বগুড়া।

১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত খালেদা জিয়া অংশ নিয়েছেন পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ১৯৯১, ১৯৯৬ (দুটি নির্বাচন) ও ২০০১ সালে পাঁচটি করে আসনে দাঁড়িয়ে খালেদা জিতেছেন সবকটিতেই। ২০০৮ সালে ৩টিতে দাঁড়িয়ে জেতেন তিনটিতেই। অথচ, ২০০৮ সালে তাঁর দল বিএনপি মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুব মজবুত ছিল না, প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের তুলনায় অনেকটাই দুর্বল ছিল বিএনপির সংগঠন। কিন্তু সেবার বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে (১৩৭) জিতে সরকার গঠন করেছিল। খালেদা জিয়া ঢাকার দুটি আসনে (ঢাকা–৫ ও ঢাকা–৯) নির্বাচন করেছিলেন। বিপুল ব্যবধানে জিতেছিলেন দুটিতেই। এ ছাড়াও নির্বাচন করেছিলেন বগুড়া–৭, ফেনী–১ ও চট্টগ্রাম–৮ থেকে। এ তিনটিতেও খালেদার জয়ের ব্যবধান ছিল বিশাল।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়নি। একপেশে নির্বাচনে খালেদা জিয়ার হেরে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। তিনি সেই নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছিলেন পাঁচটি আসনে। ’৯৬’র ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল ২৫১টি আসন। সেই নির্বাচনের সংসদ ১৩ দিনের মাথায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাশ করে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ইতিহাসের প্রথম নির্বাচনে ১৪৫ আসন পেয়ে সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। বিএনপি পেয়েছিল ১১৬ আসন। খালেদা জিয়া বগুড়া–৬, বগুড়া–৭, ফেনী–১, লক্ষ্মীপুর–২ ও চট্টগ্রাম–১ আসন থেকে নির্বাচন করে জিতেছিলেন পাঁচটিতেই। শুধু তা–ই নয়, বগুড়া, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের আসনগুলোতে তিনি শতকরা আশি ভাগের কাছাকাছি ভোট পেয়েছিলেন।

২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনেও ছিয়ানব্বই সালের আসনগুলোতেই নির্বাচন করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বগুড়া–৬,৭ ফেনী–১, লক্ষ্মীপুর–২ ও চট্টগ্রাম–১। তাঁর ভোট আগের বারের চেয়ে বেড়েছে প্রতিটি আসনেই।

একাধিক আসনে নির্বাচন করা খালেদা জিয়া ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর নিজের পৈত্রিক ফেনী–১ আসন রেখে বাকিগুলো ছেড়ে দিয়েছিলেন। ২০০১ সালে তিনি ধরে রাখেন শ্বশুরবাড়ি বগুড়া–৬ আসনটি।

১৯৯১ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সময় মায়ের সঙ্গে খালেদা জিয়া। ছবি: লুৎফর রহমান বীনু
১৯৯১ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সময় মায়ের সঙ্গে খালেদা জিয়া। ছবি: লুৎফর রহমান বীনু

২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন করে একজন প্রার্থীর সর্বোচ্চ তিনটি আসনে নির্বাচন করার বিধান হয়। খালেদা জিয়া সেবার নিজের পৈত্রিক ও শুশুরবাড়ির আসনেই নির্বাচন করেন। ফেনী–১, বগুড়া–৬ ও ৭ আসনে নির্বাচন করে জেতেন তিনটিতেই। নির্বাচনের পর তিনি ফেনী–১ আসন রেখে বাকি দুটি ছেড়ে দেন।

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বচনে বিএনপি অংশ নিলেও খালেদা নির্বাচন করতে পারেননি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে থাকার জন্য। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই মামলায় কারাগারে যেতে হয়েছিল তাঁকে।

রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়ার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তাঁরও নির্বাচনী রেকর্ড খালেদা জিয়ার মতো নয়। তিনি ১৯৮৬ সালে প্রথমবার নির্বাচন করেন। ৩টি আসনে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন তিনটিতেই। তবে ১৯৯১ সালে ৩ আসনে দাঁড়িয়ে হেরে যান দুটিতেই। ঢাকার দুটি আসনে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন (ঢাকা–৭ ও ঢাকা–১০)। শেখ হাসিনা ২০০১ সালের নির্বাচনেও রংপুরের একটি আসনে হেরেছিলেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ অল্পের জন্য খালেদা জিয়ার মতো ‘অজেয়’ থাকতে পারেননি নির্বাচনী লড়াই। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে পাঁচটি করে আসনে দাঁড়িয়ে তিনি জিতেছিলেন সবকটিতেই। ২০০১ সালে তিনি নির্বাচন করতে পারেননি মামলায় দণ্ডিত থাকার কারণে। ২০০৮ সালে তিনি তিনটি আসনে দাঁড়িয়ে জেতেন সবকটিতেই। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি একটি আসনে হেরে যান। তবে ২০১৮ সালে তাঁর জীবনের শেষ নির্বাচনে তিনি সব আসনেই জয় পেয়েছিলেন।

সম্পর্কিত